বাবা ডা. মাবুদকে নিয়ে ছেলে ইন্তিসারের আবেগঘন স্মৃতিচারণ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২০

যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় প্রথম মারা গেছেন বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী (৫৩)। প্রায় দুই সপ্তাহ করোনাভাইরাসে ভুগে বুধবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন তিনি। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সরবরাহ করার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন সিলেটের সন্তান বাংলাদেশি এই চিকিৎসক।

ডা. মাবুদ মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালে তার সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করার সুযোগ হয়েছিল ছেলে ইন্তিসার চৌধুরীর (১৮)। আবেগঘন সেই বিদায়বেলার স্মৃতিচারণ করেছেন ইন্তসার।

ব্রিটিশ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইটিভি নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি আব্বুর হাত ধরতে পেরেছিলাম। সেখানে অনেক দোয়া করেছিলাম আব্বার জন। আসলে আমি আব্বুকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল আমি আব্বুর সঙ্গে যা যা করেছি সে বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। আমি আব্বুকে বলেছি, আমি তাকে কত ভালোবাসি।’

ইন্তিসার বাবার সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে তার বোন ওয়ারিশা (১১)। এজন্য প্রচণ্ড আক্ষেপ ইন্তিসারের।

তিনি বলেন, ‘এতে আমার বোনের হৃদয় ভেঙে গেছে। তবে আমি মনে করি, আমার বোন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এমনকি প্রতিটা ক্ষেত্রেই সে আমার চেয়েও অধিক শক্তিশালী।’

ডা. মাবুদ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সরবরাহের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের ত্রুটি তুলে ধরায় গর্বিত তার ছেলে ইন্তিসার।

বিবিসি রেডিও ৪-এর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাবা যখন ব্রিটিশ সরকারের কাছে এই আবেদন করেন তখন তিনি এমন অবস্থায় ছিলেন যে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না। আসলে তিনি ওইসময় যা ত্রুটিপূর্ণ মনে করেছিলেন তা-ই (ফেসবুকে) ব্রিটিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছিলেন। এতে বোঝা যায়, তিনি কতটা তার সহকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।’

‘ব্রিটিশ সরকার ওই সময় যা করছিলেন তার ভুলত্রুটি সরকারের কাছে তুলে ধরার যে সাহস বাবা দেখিয়েছেন, তার জন্য আমি গর্ববোধ করি’-যোগ করেন ইন্তিসার।

সিলেটের সন্তান ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ফয়সাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পূর্ব লন্ডনে পেশায় একজন ইউরোলস্টি কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

প্রচণ্ড আতিথেয়তাপরায়ণ এবং পরোপকারী ছিলেন এই চিকিৎসক। পরিচিত যে কেউ লন্ডনে গেলেই ডা. ফয়সালের অতিথি হয়ে যেতেন তিনি।

ইংল্যান্ডে ইউরোলোজির অস্ত্রপ্রচারের বিশেষজ্ঞ হবার পরেই প্রতি বছর কমপক্ষে দুবার বাংলাদেশে আসতেন গরিব রোগীদের বিনামূল্যে অস্ত্রপ্রচার করানোর জন্য এবং নতুন প্রজন্মের ইউরোলজিস্ট তৈরি করার জন্য। ফয়সাল বাংলাদেশ ইউরোলোজিক্যাল সোসাইটির একজন প্রধান উপদেশক ছিলেন।

বাংলাদেশ না থেকেও বাংলাদেশি রোগীদের নিয়মিত টেলিফোন বা ইন্টারনেটে বিনামূল্যে জটিল রোগের জরুরি কনসালটেন্সি করতেন সিলেটের সন্তান ফয়সাল। সেখান থেকেই তার স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের বাইরে থাকা চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টেলিমেডিসিনের নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন। এটি নিয়ে অনেকদূর কাজ করেছিল এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য এ বছরের শীতের ছুটিতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন।

ডা. ফয়সালের স্ত্রী রানী পেশায় একজন মনোচিকিৎসক। ছেলে ইন্তিসার ও মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়ে ছিল তাদের সংসার।

সূত্র : ডেইলি মেইল

এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।