কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজও করে শিশু পরিবারের শিশুরা
কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদাসিনতার কারণে সীমাহীন কষ্টে দিনযাপন করছে শরীয়তপুরের একমাত্র শিশু পরিবারের (বালক) শিশুরা।
ঠিক মতো খাওয়া না পাওয়া, কঠিন কাজগুলো নিজেই করা এবং মাঝে মধ্যে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজ এই কোমলমতি শিশুদের দিয়ে করানোসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে শিশু পরিবারের কর্মকর্তাদের প্রতি।
স্থানীয় কয়েকজন তো জাগো নিউজের এই প্রতিবেদক দেখেই অভিযোগ করে বললে, উৎকোচ ছাড়া শিশু পরিবারে কোনো শিশুকে ভর্তি করানো হয় না।
সম্প্রতি সরেজমিনে সেখানে দেখা যায়, শিশু পরিবারের অফিস কক্ষটি বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আল- আমিন নামে একটি আবাসিক শিশু এসে বলে আমি আপনাকে দেখে স্যারকে খবর দিয়েছি। স্যার চাবি নিয়ে আসছেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর ফজলুল হক নামে শিশু পরিবারের একজন বড় ভাই (চাকরীজীবী) এসে অফিসকক্ষ খুলে জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন ।
তিনি জানালেন, উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও সহ-তত্ত্বাবধায়ক অফিসে আসেননি সম্ভবত ছুটিতে আছেন।
শিশু পরিবার সূত্রে যানা যায়, ১৯৯৩ সালে শরীয়তপুর পৌর শহরের স্টেডিয়ামের পাশে ধানুকা এলাকায় শিশু পরিবারের নতুন আবাসিক ভবনটি চালু হয়। ৩.১৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ১৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারির পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৬ জন। শিশু পরিবারে দুইজন কারিগরি প্রশিক্ষকের মধ্যে একজন বরিশাল শিশু পরিবারে প্রেষণে কর্মরত। এখানকার বেশির ভাগ কম্পিউটার অকেজো। সেলাই মেশিন রয়েছে, নেই শুধু দর্জি প্রশিক্ষক। একজন মেট্রনকাম নার্স থাকলেও শিশুদের পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না তাকে দিয়ে। এছাড়াও শিশুদের আবাসিক ভবনটি জরাজীর্ণ এবং বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এরই মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চার তলা ভবনটিতে ৩৪ জন শিশু বসবাস করছে। তাদের দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত লোক না থাকায় অযত্ন আর অবহেলায় সেখানে তারা বড় হচ্ছে।
শিশুদের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার বিশেষ করে মাছ, মাংস ও রুটি যে পরিমাপে দেওয়ার কথা তার চেয়ে কম দেন। তা প্রমাণিত হওয়ার পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি শিশুদের দিয়ে সঠিক আছে বলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।
বর্তমানে শিশু পরিবার চত্বরটি এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
শিশু পরিবারের প্রশিক্ষক মাসুদ করিম জানান, এখানে একশত আসনের ব্যবস্থা থাকলেও আমরা ৫৫ জন শিশুকে ভর্তি করতে পেরেছি। এর মধ্যে ২০ জন পালিয়ে গেছে।
পালানোর কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাড়ির আদর যত্ন, ভালোবাসা ও বাড়ির প্রতি অন্তরের টানে শিশুরা পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের আবাসিক ভবনটি জরাজীর্ণ এবং বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এই শিশু পরিবারটির স্টাফ কোর্য়াটারে কেউ থাকেন না। ভেতরে একটি পুকুর থাকলেও পুকুরের চাষকৃত মাছ শিশুরা খেতে পায় না। তা বিক্রি করে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শিশু জাগো নিউজকে জানায়, আমাদের দিয়ে স্যারদের (কর্মকর্তার) বাসায় ধোয়ামোছার কাছ কর্ম করানো হয়।
এ ব্যাপারে শিশু পরিবারটির ভারপ্রাপ্ত উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক মনোয়ার মাহমুদ মিয়ার জাগো নিউজকে জানান, সরকার যেমন বরাদ্দ দেয় তেমন খাবার শিশুদের দেয়া হয়। এ কথা বলার পরই তিনি ফোনের সংযোগটি বিছিন্ন করে দেন।
এমএএস/পিআর