বিক্ষোভের মুখে করোনা হাসপাতালের কাজ ‘বন্ধ’ করলো আকিজ
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রাজধানীতে চীনের আদলে হাসপাতাল নির্মাণ করতে চেয়েছিল দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ বশির উদ্দিন ব্যক্তি উদ্যোগে এটি করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে উদ্যোগে ভাটা পড়লো। হাসপাতাল বানানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিক্ষোভের মুখে ওই এলাকায় নিজের জমির মালিকানার সাইনবোর্ডের নিচে তাৎক্ষণিক হার্ডবোর্ডে ‘কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হলো’ লেখা টানিয়ে দেয় আকিজ গ্রুপ।
যদিও এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আকিজ গ্রুপের এমডিকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ‘সুস্পষ্টভাবে’ না জেনে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ ও হামলা করে। শনিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির সামনে পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা-ভাড়াটিয়া এসে বিক্ষোভ করেন বলে জানা গেছে। তারা সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। সেই সঙ্গে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভও করেন। তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরেরও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এসময় স্থানীয় কাউন্সিলর এলাকাবাসীর সঙ্গে ছিলেন বলেও জানা যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বিক্ষোভের পর সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী কমিশনার সালমান হাসান জানান, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল বানাচ্ছে আকিজ গ্রুপ এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা প্রতিষ্ঠানটির সামনে বিক্ষোভ করে। তারা এমন কোনো হাসপাতাল হতে দেবে না, এমনটাই দাবি তাদের।
সহকারী পুলিশ কমিশনার সালমান বলেন, আমি আকিজ গ্রুপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, আসলে হাসপাতাল নয় এখানে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ভবন হচ্ছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। যারা ভুল ম্যাসেজে ভুল বুঝে বিক্ষোভ করতে এসেছিল তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাশেদুল ইসলাম শোভন বলেন, র্যাংসের কাছ থেকে আকিজ গ্রুপ এই প্লটটা কিনেছে। আমাদের যে স্থানীয় কমিশনার এবং আমরা এলাকাবাসীও জানতাম না। পরে ধীরে ধীরে জানতে পেরেছি, তারা এই প্লটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করবেন। এখানে একটা শাখা করবে উনারা। আমরা সবাই জানি, করোনা সারাবিশ্বেই আতঙ্ক। ইতোমধ্যে বহু মানুষ মারা গেছে। আমরাও চাই এটার সঠিক চিকিৎসা হোক, সবাই সুস্থ হোক। কিন্তু এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকের বসবাস। যেহেতু এখানে অনেক লোক বাস করে, তাই আমরা চাচ্ছি না এলাকার ভেতরে এরকম একটা হাসপাতাল তৈরি হোক। আমরা এলাকাবাসী চাচ্ছি, তারা অস্থায়ী যে ক্যাম্পগুলো করতে চাচ্ছে, এগুলো ঢাকার সিটির খালি জায়গায় করুক। যেমন, গুলিস্তান স্টেডিয়াম আছে, আর্মি স্টেডিয়াম আছে, বিজিএমইএ ভবন আছে, পূর্বাচল স্টেডিয়াম পুরাটাই খালি আছে – এসব জায়গাতে করুক এটা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি এটা ছোঁয়াচে রোগ। এটা বাতাসেও ছড়ায়। এই রোগে যেকোনো সময় মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত আমাদের এলাকায় এই ধরনের সমস্যায় আমরা পড়িনি। এখন এখানে যদি এই হাসপাতালটা হয়, একটা মানুষের শরীরে যদি ভাইরাসটা চলে আসে, তাহলে পুরো এলাকাটা লকডাউন করে দেবে। আমাদের বের হওয়া ও প্রবেশের রাস্তা একটাই।’
দুপুর ২টার দিকে শোভন আরও বলেন, ‘আমরা ঘণ্টাখানেক আগে গিয়েছিলাম। আমাদের কমিশনার এসেছিলেন। আমরা অনেক অনুরোধ করি গেট খোলার জন্য। আমরা বলি- এখানে যে দায়িত্বে আছেন, তার সঙ্গে কমিশনার সাহেব কথা বলবেন। বহুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে আমাদের কমিশনারকে, তারা গেট খুলছিল না। বাধ্য হয়ে আমরা ভিতরে ঢুকি, গিয়ে কথাবার্তা বলেছি। তারা বলেছেন, আমাদের কাজ এখানে বন্ধ থাকবে। আমরা এখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার থেকেই একটি খবর চাউর হয় যে, করোনা চিকিৎসায় ঢাকায় হচ্ছে চীনের মতো হাসপাতাল। সেটা করছে আকিজ গ্রুপ। দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ বশির উদ্দিন ব্যক্তি উদ্যোগে এটি করছেন বলেও জানা যায়। এ খবরে বিভিন্ন মহলে আশার সঞ্চার হয়। নেটিজেনরা এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে।
কিন্তু উত্তরায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপনে এলাকাবাসীর বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা এক্ষেত্রেও ঘটলো।
জেইউ/এসএইচএস/জেআইএম