করোনাভাইরাস : ঢাকা ছাড়ছেন উদ্বিগ্ন কূটনীতিক ও বিদেশিরা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে বিদেশি নাগরিক ও কূটনীতিকদের। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাড়তে শুরু করেছেন তারা। ঢাকা ছেড়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারাও। কূটনৈতিক সূত্র ও বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে ভুটানের দ্রুক এয়ারের দুটি স্পেশাল ফ্লাইটে ১২৬ জন যাত্রী ও দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা ঢাকা ছেড়েছেন। তবে ভুটান দূতাবাস জাগো নিউজকে জানায়, এরা সবাই ভুটানের নাগরিক ও শিক্ষার্থী। ভুটানের কোনো কূটনীতিক ঢাকা ছাড়েননি।
বুধবার (২৫ মার্চ) রাতে মালয়েশিয়ান ফ্লাইটে দেশটির মোট ২২৫ জন নাগরিক দেশে ফিরে গেছেন বলে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি সূত্র জাগো নিউজকে জানায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকার মালয়েশিয়া দূতাবাস জানায়, শুধুমাত্র মালয়েশিয়ার নাগরিক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা এবং কয়েকজনের কূটনীতিকের পরিবারের সদস্যরা এই ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন। কোনো কূটনীতিক এই মুহুর্তে ঢাকা ছাড়েননি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করলেও কূটনীতিকদের সুবিধার্থে যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল খোলা রেখেছে। বিদেশি নাগরিক ও কূটনীতিকরা প্রধানত এই দুটি পথ ব্যবহার করে ফিরে যাচ্ছেন।
তাছাড়া জাতিসংঘসহ অনেক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যাংককে আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছে। ব্যাংককে যাদের আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় রয়েছে, তারা যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে সেখানে যেতে পারেন। ফলে সেই বিবেচনায় যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল খোলা রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারাই ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়ে ব্যাংককে পৌঁছেছেন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, তারা মনে করে করোনাভাইরাস শনাক্তকারী কিটের সংকটে বাংলাদেশে এ ভাইরাসের প্রয়োজনানুযায়ী টেস্ট করানো যাচ্ছে না। শুধুমাত্র যাদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বা যাদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যাচ্ছে, শুধু তাদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে এখন পর্যন্ত কতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সঠিক কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই।
ফলে সরকার যে কয়জন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বলছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কূটনীতিকদের। এ অবস্থায় দায়িত্ব পালনে নিজেরা বাধ্য হলেও নিজ পরিবারের সদস্য ও দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থান নিরাপদ মনে করছেন না তারা।
আপাতত ঢাকায় যাদের না থাকলেও চলছে এমন কূটনীতিকরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ দেশের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। কিন্তু দূতাবাস চালাতে যাদের থাকতেই হচ্ছে তারা পরিবারকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বা দিয়েছেন বলে জাগো নিউজকে জানান একজন পশ্চিমা দূতাবাসের কর্মকর্তা। বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব ডা. খলিলুর রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ, পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ, কনস্যুলার ও কল্যাণ, আফ্রিকাসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচ মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় থাকা বিদেশি কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব কূটনীতিক ফিরে যেতে চান, তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কেও জানতে চান কূটনীতিকরা।
বুধবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দফতরে সাক্ষাৎ কনে। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের কাছে তাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈদেশিক নাগরিকদের সবধরনের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, কিছু দিনের জন্য সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হটলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে।
জেপি/এমএফ/জেআইএম