এটিএম আজহারের মৃত্যু পরোয়ানা যাচ্ছে কারাগারে
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৬ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির আদেশপ্রাপ্তির পর মৃত্যু পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন (ডিসি), আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশ রয়েছে তাতে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমদ জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে রোববার (১৫ মার্চ) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়।
রায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর রোববার বিকেলে এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘রায় প্রকাশ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করা না হলে ফাঁসি কার্যকরের আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে। রিভিউ আবেদন করলে শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর রায় দণ্ড কার্যকর করা হবে।’
অন্যদিকে এটিএম আজহারুল ইসলামের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাইনি। রায়ের কপি হাতে পেলে নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করব।’
এর আগে খালাস চেয়ে আজহারুল ইসলামের করা আপিল আবেদনের আংশিক মঞ্জুর করে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
এরও আগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ২৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ১৮ জুন আপিলের শুনানি শুরু হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শত শত বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের মধ্যে এক নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয় বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখেন। আর ৫ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।
আইন অনুযায়ী এখন ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। রিভিউতে তার আবেদন খারিজ হলে আর কোনো আইনি প্রতিকার তার থাকবে না। সেক্ষেত্রে দোষ স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করতে পারবেন তিনি। সেই আবেদন গৃহীত না হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর করবেন।
এটিএম আজহারুল ইসলাম হলেন সপ্তম ব্যক্তি যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে চূড়ান্তভাবে আপিল বিভাগ থেকে মৃত্যুদণ্ডের রায় পেয়েছেন। এর আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অপর এক আসামি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড থেকে কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এফএইচ/এসএইচএস/এমকেএইচ