স্যার, আইইডিসিআর থেকে বলছি, ভালো আছেন তো?
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:১৫ পিএম, ১০ মার্চ ২০২০
‘স্যার, আইইডিসিআর থেকে রেহনুমা (ছদ্মনাম) বলছি। আপনি ভালো আছেন তো? গত ৩ মার্চ দেশে ফেরার পর আপনার বা পরিবারের কারও শ্বাসকষ্ট, জ্বর কিংবা হাঁচি-কাশি হয়নি তো? যাক, শুনে ভালো লাগলো, সবাই সুস্থ আছেন। কোনো ধরনের সমস্যা হলে এই নম্বরে জানাবেন প্লিজ।’
ধীরগতিতে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই একজন তরুণীকে এভাবেই কথা বলতে শোনা গেল। পাশের ডেস্কে আরেক তরুণী চোসত ইংরেজিতে অস্ট্রেলিয়ান এক নাগরিকের কাছে শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছিলেন। একজনের সঙ্গে শেষ করেই কম্পিউটারে চোখ রেখে মোবাইল ফোনে আরেকটি নম্বর ঘুরিয়ে বিরামহীনভাবে কথা বলে যাচ্ছিলেন তিনি।
এ দৃশ্য মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুর ১টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইইডিসিআর) ভবনের নিচ তলার। এখানে এক ঝাঁক তরুণী সম্প্রতি চীন, সিঙ্গাপুর, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ আছে কিনা ইত্যাদি জেনে নিচ্ছিলেন।
নিচ তলার আরেক পাশে (চিকিৎসকরা) হটলাইনে মোবাইল ফোনে সম্প্রতি বিদেশ ফেরত দেশি-বিদেশি নাগরিক ও দেশে অবস্থানরত উদ্বিগ্ন নাগরিকদের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণ চিকিৎসক জানান, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তিনি একাই হটলাইনে ৯০০ মানুষের কল রিসিভ করেছেন। অন্যজনের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত থাকায় অনেক কল রিসিভ বা ব্যাকও করতে পারেননি।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি-সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে প্রায় দুই হাজার ৮০০ কল রিসিভ করা হয়। এসব কলের অধিকাংশই করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের।
আইইডিসিআরের একদল তরুণ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক দিন ধরে নাওয়া খাওয়া ভুলে হটলাইনে সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব ও বিদেশ ফেরত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নিতে ব্যস্ত সময় কাটান। দৈনিক অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লেও তারা হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা জানান, গত ২১ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল, শাহ আমানত ও সিলেটের বিমানবন্দর, পরে সব স্থল, সমুদ্রবন্দর এবং রেলস্টেশন দিয়ে আগত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হেলথ স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ লাখ বিদেশ ফেরত যাত্রীর হেলথ স্ক্রিনিং হয়েছে। এসব যাত্রীর মধ্যে যারা চীন, ইতালি ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাদের তথ্য উপাত্ত হেলথ কার্ড ও হেলথ ডিক্লারেশন ফরমের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন থেকে সংগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন।
এছাড়া দেশে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর হটলাইনের পুরোনো চারটি নম্বরের ওপর বেশি চাপ পড়ায় গতকাল আরও আটটি মোবাইল নম্বর যোগ করা হয়। বছরের অন্যান্য সময় অন্য রোগব্যাধি নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে করোনা নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন একদল চিকিৎসক ও কর্মকর্তা। যতদিন করোনাভাইরাস থাকবে ততদিন তারা এভাবেই সেবা দিয়ে যাবেন বলে জানান আইইডিসিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এমইউ/এএইচ/জেআইএম