করোনার খবর শুনে মাস্কের দোকানে ভিড়
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এদের মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এ তিনজন ছাড়া আরও দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে যেন মাস্ক কেনার হিড়িক পড়ে যায়। ফার্মেসি, স্টেশনারি দোকান এমনকি ফুটপাতের দোকানেও মাস্ক কিনতে এক ধরনের মাতামাতি সৃষ্টি হয়। হঠাৎ মাস্কের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত দামে এসব মাস্ক বিক্রি করেন কিছু অসাধু দোকানি। অনেকটা আতঙ্কের কারণে বাধ্য হয়ে বেশি দামেই এসব মাস্ক কিনছেন সাধারণ মানুষ।
যদিও প্রেস ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে রেখে লক্ষণ-উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তারা বর্তমানে ভালো আছেন। এ মুহূর্তেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
তবে সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর বাড্ডায় ফুটপাতে মাস্ক বিক্রি করা একটি দোকানে দেখা যায়, মাস্ক কিনতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড়। সবাই মাস্ক কিনছেন নিজের জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের জন্যও।
সাব্বির আহমেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন খবর শোনার পর নিরাপদে থাকতে মাস্ক কিনে নিচ্ছি। যদিও এই সুযোগে বেশি দামে তারা বিক্রি করছে। চায়না মাস্ক ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর বাংলাদেশি মাস্ক ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। বলতে গেলে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম।
ফুটপাতের মাস্ক বিক্রেতা বলেন, হঠাৎ করে মাস্ক বিক্রি বেড়ে গেছে। সবাই মাস্ক কিনছে তিন-চারটা করে। তাই নিমেশেই সব শেষ হয়ে গেছে। এখন খালাতো ভাইকে দোকেনে রেখে আমি আরও মাস্ক কিনতে মোকামে যাচ্ছি। আগের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে এসব মাস্ক বিক্রি করলাম, কারণ মোকামেও এসবের দাম বেড়ে গেছে।
সুযোগে সংকটের কথা বলে আবারও একই কাজ করছে ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা। ‘জোগান নেই অজুহাতে’ বেড়েছে মাউথ মাস্কের, অ্যান্টি ডাস্ট মাস্কের (সার্জিক্যাল মাস্ক) দাম। রাস্তায়, ফুটপাতে, বিভিন্ন অনলাইন শপে মাস্ক বিক্রি হলেও ফার্মেসিগুলোতে মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারের মানসম্মত সব মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা হয়। শুনেছি বর্তমানে চীন নিজেদেরই চাহিদা মেটাতে পারছে না। এ কারণে বাংলাদেশেও এই মাস্কের আমদানি কমেছে। একই অবস্থান অনলাইনের কেনাকাটার ওয়েবসাইট ও পেজগুলোতে।
সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি ফার্মেসি ও অনলাইন শপিং ওয়েবে দেখা গেছে, ডিস্পোজেবল নন-ওভেন ফেব্রিক মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়, কটন মাস্ক ১২০ টাকা, স্পঞ্জ অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক ৫০ টাকা, এন-৯৫ (৮২১০) মাস্ক ২৫০ টাকা, এন-৯৫ (৮১১০এস) ১৮০ টাকা, পিএম-২.৫ মাউথ মাস্ক ১২০ টাকা, সাওমি এয়ারপপ থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যান্টি ফগ মাস্ক ৩৫০ টাকা, সাওমি স্মার্টলি ফিল্টার মাস্ক ৪৫০ টাকা এবং সাওমি পিএম-২.৫ লাইট ওয়েট মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ টাকা। ক্রমান্বয়ে এসবের দাম আরও বাড়তে পারে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জনে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বিশ্বব্যাপী ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৪৫ জন।
জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। জার্মানিতে এই ভাইরাসে ৮শ জন আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্সে ৯৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৬ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
স্পেনে আক্রান্ত ৫২৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৪৩৮, মৃত্যু ১৯। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২৬৮ এবং মারা গেছে ১ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২০৯ মৃত্যু ২। ইরাকে আক্রান্ত ৫৪, মৃত্যু ৪। ভারতে ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি।
এছাড়া, সুইডেন আক্রান্ত ১৬১, সিঙ্গাপুরে ১৩৮, নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১২৮ এবং মৃত্যু ১, নরওয়েতে আক্রান্ত ১২৭, বেলজিয়ামে ১০৯, হংকংয়ে ১০৮, মালয়েশিয়ায় ৯৩, অস্ট্রিয়ায় ৮১, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ৭৭, মৃত্যু ৩, বাহরাইনে ৮৫, কুয়েতে ৬১, কানাডায় ৬০, থাইল্যান্ডে ৫০ এবং মৃত্যু ১, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৫ এবং মৃত্যু ১, গ্রিসে ৬৬, আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ৫০, সান মারিনোতে ২৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ১, ডেনমার্কে আক্রান্ত ২৭, লেবাননে ২৮, ইসরাইলে ২৫, চেক রিপাবলিকে ২৬, আয়ারল্যান্ডে ১৯, আলজেরিয়াতে ১৯, মিসরে ৪৮ এবং ভিয়েতনামে ১৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
অপরদিকে, ওমানে ১৬, ফিলিস্তিনে ১৯, মিসরে ১৫, ফিনল্যান্ডে ১৯, ব্রাজিলে ১৯, ইকুয়েডরে ১৪, পর্তুগালে ১৩, রাশিয়াতে ১৫, ক্রোয়েশিয়ায় ১২, কাতারে ১২, ম্যাকাউতে ১০, এস্তোনিয়ায় ১০, জর্জিয়ায় ১৩, রোমানিয়ায় ১৩, আর্জেন্টিনায় ৯, স্লোভেনিয়ায় ১২, আজারবাইজানে ৯, বেলারুশে ৬, মেক্সিকোতে ৭, পাকিস্তানে ৬, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৬ এবং মৃত্যু ১, সৌদি আরবে ৭, চিলিতে ৭, পোল্যান্ডে ৬, স্লোভাকিয়ায় ৩, পেরু ৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৪, নিউজিল্যান্ডে ৫, সেনেগালে ৪ ও হাঙ্গেরিতে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া লুক্সেমবার্গে ৩, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৩, বসনিয়ায় ৩, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে ২, মরক্কোতে ২, আফগানিস্তান ৪, কম্বোডিয়া ২, বুলগেরিয়া ২, ক্যামেরুন ২, মালদ্বীপ ২, দক্ষিণ আফ্রিকা ২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে, আন্দোরা, আর্মেনিয়া, জর্ডান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগোতে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এএস/বিএ/এমকেএইচ