জনবান্ধব গণপরিবহন বাড়লে কমবে ব্যক্তিগত গাড়ি
ঢাকা শহরকে পথচারী ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং গণপরিবহন বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর জীবনের অর্ধেকটা সময় চলে যায় সড়কে। জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা ও ফুটপাত না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জনবান্ধব গণপরিবহন বাড়ানো গেলে ব্যক্তিগত গাড়ি কমে যাবে। ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণ শর্তারোপের উপরেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
‘পার্কিং: বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
রোববার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক গাউসি পিয়ারীর সভাপতিত্বে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ঢাকায় চলাচলকারী মানুষ প্রত্যেকেই একটি রোগের শিকার। সেটা হচ্ছে যানজট, জনবান্ধব ফুটপাত না থাকা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ানো। এ রোগে মুক্তির একমাত্র স্থায়ী ওষুধ হচ্ছে ঢাকাকে গুরুত্বহীন করা। এছাড়া ঢাকাকে বাসযোগ্য করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাসযোগ্য শহরের তালিকার তলানিতে বাংলাদেশ। আমরা সরকারের সঙ্গে পার্টনারশিপের মতো করে কাজ করতে পারি, চাপ দিতে পারি। কিছু জনবান্ধব কাজ করার ক্ষেত্রে বাধ্য করতে পারি।
যে কোনো সমস্য সমাধানের ক্ষেত্রে বাধার মুখোমুখি হচ্ছি। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের অবস্থা এলার্মিং, অন্য কোনো দেশ হলে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হতো। এমন অবস্থার মধ্যেও আমরা সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছি না।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স ভিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মাদ খান বলেন, ঢাকা শহরে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মেট্রোরেল করবেন করেন সমস্যা নেই। কিন্তু প্রশ্ন এই সরকারের টানা ১২ বছরের ক্ষমতায় জনবান্ধব গণপরিবহনের জন্য কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন। শূন্যের উপরে মেট্রোরেল করছেন, এখন আবার ২৪০ কিমি সাবওয়ে করতে চাইছেন। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার করা হচ্ছে কিন্তু হাঁটার জন্য পথচারীবান্ধব ফুটপাত আমরা দেখি না।
উন্নয়ন ধনীদের জন্য নয়, উন্নয়ন সাধারণদের জন্য। আগামী ঢাকা যদি গণপরিবহনবান্ধব হয় তাহলে পার্কিং নীতিমালায় পার্কিং স্পেস রাখার বাধ্যবাধকতা বিপরীত সিদ্ধান্ত। কোনোভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং নীতিমালায় রাখা যাবে না।
হরহামেশা শুনি ঢাকা হবে হংকং, সিঙ্গাপুর। কিন্তু আপনার ইমারত পার্কিং বিধিমালা, ফুটপাত গণপরিবহনের অনুন্নত রেখে তা সম্ভব নয়।
কানাডার হেলথ ব্রিজের আঞ্চলিক উপদেষ্টা দেবরা ইফরইমসন বলেন, ঢাকা শহর আজব শহর। এ শহরের স্পেস অনুযায়ী যে পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি চলে তা অন্য কোন দেশে দেখা যায় না। ফুটপাতে হাঁটার চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকে গুরুত্ব দিলে এ শহরে আগামী ২০ বছর পর দুর্ভোগ বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন বলেন, সরকার যে ইমারত নীতিমালা করেছে সেটা গোজামিলের নীতিমালা। ব্যক্তিগত গাড়ি যখন নিয়ন্ত্রণ করে গণপরিবহনকে প্রমোট করার কথা সেখানে এই ২০২০ সালে এসেও ইমারত বিধিমালায় গাড়ি থাক না থাক পার্কিং বাধ্যতামূলক করার বিধি গোজামিল ছাড়া আর কি হতে পারে। সড়কে ফ্রি অব কস্ট পার্কিং দেখা যায় কিন্তু বাইসাইকেল লেন করার কথা বললে শুনি স্পেস নেই। মেট্রোরেলের কারণে সংকুচিত সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল সহজ করতে ফুটপাত তুলে দেয়া কিংবা ফুটপাতে পার্কিং কোনো সমাধান হতে পারে না।
জেইউ/এএইচ/এমকেএইচ