‘এ রাষ্ট্র ত্বকীকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি’
আজ শনিবার (৭ মার্চ) ত্বকী হত্যার সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। মাঝে এতগুলো বছর চলে গেলেও এই ঘটনার বিচার হয়নি। ত্বকী হত্যাকাণ্ড বিচারহীনতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এমন সম্ভাবনাময় কিশোরের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিচার যতদিন এ দেশে হবে না, ততদিন এ দেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ত্বকী হত্যার সাত বছর পূর্তিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা এ কথা বলেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওই দিনই সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রাব্বি। ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা চারারগোপ এলাকার খালে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায়। ওইদিন রাতেই ত্বকীর বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
পরে ১৮ মার্চ সাংসদ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ত্বকীর বাবা।
গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকী হত্যা একটি একটি রাজনৈতিক হত্যা। ত্বকীর বাবার কর্মকাণ্ডের জের ধরেই এমন মেধাবী কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। দেশে বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণেই ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুর মতো একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করতে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
‘ত্বকী কাউকে আঘাত করেনি। কারও প্রতি অন্যায় করেনি। তারপরও তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ রাষ্ট্র তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তার হত্যার বিচার করতে পারেনি। ত্বকীর বিচারের পাশাপাশি আর কোনো কিশোরকে যেন ত্বকীর মতো হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয়, সেজন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে’-বলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, সমাজকে রক্ষা করতে আমাদের আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই ত্বকীসহ সাগর-রুনি ও তনুর বিচার বিচারকার্য শেষ করতে বাধ্য করা হবে।
তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা কতটা নিয়ন্ত্রিত সেটা পিরোজপুরের বিচারককে বদলির বিষয়টি দেখলেই বোঝা যায়। সরকারের পছন্দের মানুষকে জামিন না দেয়ায় পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে বদলি করা হয়েছে।
সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বলেন, ত্বকীর বিচারের জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারি। ত্বকীর বিচারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে মানববন্ধনের প্রস্তাবও দেন তিনি।
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, আইনের ওপর আমাদের আর ভরসা নেই। বর্তমানে দেশে আইনের চেয়ে ব্যক্তির দাম বেশি। আর ত্বকীর ঘাতকেরা সরকারের সঙ্গে জড়িত।
বৈঠকে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
এমইউএইচ/এসআর/এমএস