প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত দাসিয়ারছড়ার মানুষ
আগামী ১৫ অক্টোবর অধুনালুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমন উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়েছে দাসিয়ারছড়ায়। দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে দুদেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়।
তাই বাংলাদেশে যুক্ত হওয়া বিলুপ্ত সবচেয়ে বড় ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার ঘরে ঘরে চলছে আনন্দোৎসব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি হাতে নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় চলছে মাইকিং, মিছিল-মিটিং। আর এসব মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছেন জেলা ও ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। `ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি, শেখ হাসিনা দিল মুক্তি`, `হাসিনা মায়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম`, `হাসিনা আমার অভিভাবক হবে এবার উন্নয়ন` এরকম নানান স্লোগানে স্লোগানে মুখড়িত হয়ে উঠছে দাশিয়ারছড়ার মাটি। ফেস্টুন, পোস্টার,ব্যানার, ইতোমধ্যে শতাধিকেরও বেশি গেট তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে দফায়-দফায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দাশিয়ার ছড়ায় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (এমপি) এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বাংলাদেশে যুক্ত হওয়া এ ছিটমহলে প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে মুজিব-ইন্দিরা দাসিয়ারছড়া ইউনিয়ন। সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ ইউনিয়নের ঘোষণা দেবেন। এটি ফুলবাড়ী উপজেলার সপ্তম ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ইতোমধ্যে এখানে পল্লী বিদ্যুতের লাইন দেয়া হয়েছে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যার সুবিধা পাবে ৯৩টি পরিবার। এছাড়া আরও পাঁচ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ দ্রুত চলছে।
ভূমি অফিস, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি করে মাধ্যমিক ও বালিকা বিদ্যালয়, মাদ্রাসার জন্য জায়গা নির্ধারণ করে টিন শেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য অস্থায়ী একটি পুলিশ ফাঁড়িও দেয়া হয়েছে দাশিয়ারছড়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ তারিখ বিলুপ্ত ছিট দাশিয়ারছড়ায় পল্লী বিদ্যুত সংযোগ লাইনের উদ্বোধন শেষে কালিরহাট বাজার সংলগ্ন বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে সাবেক ছিটবাসীদের সঙ্গে এক সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন।
ফুলবাড়ী থেকে সড়ক পথে দাসিয়ারছড়ায় যাবেন তিনি। সে কারণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীন সরকারটারী থেকে দাসিয়ারছড়ার মূল বাজার কালিরহাট পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার পাকা সড়কের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ফুলবাড়ি টু নাগেশ্বরী উপজেলার ১৮ কিলোমিটার পাকা রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সদ্য বিলুপ্ত ভারতীয় ছিটমহলগুলোর মধ্যে দাসিয়ারছড়াতেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী এখানকার বাসিন্দার সংখ্যা ছয় হাজার ৮শ ৭৯ জন। এর আগে ২০১১ সালের জনগণনায় এখানকার বাসিন্দা ছিল সাত হাজার ১৩৬ জন। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে দাশিয়ারছড়ার রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তি যখন মুখ থুবড়ে পড়ে, তখন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটায় সেখানকার খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ দীপক সেনগুপ্তের নেতৃত্বে এ আন্দোলনের জন্ম হয়, যার সঙ্গে যুক্ত হয় দাসিয়ারছড়ার মানুষ।
সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে ফুলবাড়ী হ্যালিপ্যাডে নামার পর গংগারহাট হয়ে সড়ক পথে দাসিয়ারছড়ায় যাবেন। সেখানে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স বিদ্যুৎসহ ২২টি অধিদফতরের ফলক উন্মোচন করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম সফরে আসছেন তিনি ফুলবাড়ি উপজেলা এবং বিলুপ্ত ছিট দাশিয়ারছড়ায়। এর আগে তিনি ১৯৮৮ ও ১৯৯৪ সালে ফুলবাড়ী উপজেলায় দুবার সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভা এবং দাশিয়ারছড়ার সুধী সমাবেশে আয়োজন প্রায় শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রয়োজনীয় কাজগুলোর সমাপ্ত করায় ব্যস্ত রয়েছেন। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুণছি এই সীমান্ত জেলার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিশেষ নজর দেবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হচ্ছে বিগত ৬৮ বছরের ছিটমহলবাসীর বন্দিদশা থেকে মুক্তি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্রবাস জীবন যাপন করেছেন। তিনি জানেন রাষ্ট্র ছাড়া জীবন যাপনের কষ্ট। স্বাধীনতা ছাড়া বাচাঁর যন্ত্রণা। সে উপলব্ধি থেকে তার সফল কুটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে আজকে ছিটমহলবাসীর মুক্তি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফল কুটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতার কারণে ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর সর্বাঙ্গীন সফল করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে মনিটর করা হচ্ছে। দাসিয়ারছড়ায় ইউনিয়ন কমপ্লেক্স বিদ্যুৎ সংযোগসহ মোট ২২টি ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীর ইউএনওকে দাসিয়ারছড়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর ঘিরে সাবেক ছিটবাসীদের মধ্যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে তেমনি দীর্ঘ ৬৮ বছরের অন্ধকার জীবনের অবসানের স্বপ্ন দেখছেন বিলুপ্ত ছিটবাসীরা।
নাজমুল হোসেন/এমজেড/এমএস