করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের তিন স্তরের নিরাপত্তা কৌশল

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ পিএম, ০৩ মার্চ ২০২০

গত দেড় মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৬ জন যাত্রীর হেলথ স্ক্রিনিং করা হলেও তাদের একজনের শরীরেও করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ জন, দুটি সমুদ্রবন্দরে (চট্টগ্রাম ও মংলা) ৪ হাজার ৯০৮ জন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট টু বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনে ৪ হাজার ৬৪১ জনসহ সর্বমোট ২ লাখ ৪ হাজার ৯৩৭ জনের স্ক্রিনিং সম্পন্ন হয়েছে। স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বিমানবন্দরের শনাক্তকৃত করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাযুক্ত একজন পাওয়া যায়। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গত ২১ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস সন্দেহে সর্বমোট ১০২ জন যাত্রীর লালার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারো দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ (৩ মার্চ) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিতকরণ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। বিশ্বের ৬০টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত এ রোগের সংক্রমণ ঘটেনি। যদিও এ রোগে আক্রান্ত একজন রোগীও কাম্য নয়, তথাপি কোনো কারণে এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আগামী ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান করোনাভাইরাসের কারণে বাধাগ্রস্ত হবে না বলে তিনি মনে করেন।

সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ কি এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যে দেশে এখনো পর্যন্ত কোন করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ তিন স্তরের কৌশল গ্রহণ করেছে।

প্রথমত, যে সকল দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে সেসব দেশ থেকে যেন করোনাভাইরাস দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে থার্মাল ও হ্যান্ড স্ক্যানারের সাহায্যে প্রতিটি যাত্রীর হেলথ স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের কাছে হেলথ কার্ড ও হেলথ ডিক্লারেশন ফরমের মাধ্যমে পূর্ববর্তী দুই সপ্তাহে তিনি কোন দেশে সফর করেছেন, কোন ধরনের রোগে ভুগছেন ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া ওই সকল দেশ থেকে আগত যাত্রীদের নিজের তথা পরিবারের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ দিন স্বেচ্ছায় অন্তরীণ থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা যাত্রীদের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে খোঁজখবর রাখছেন। এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের পারতপক্ষে এ সময়ে দেশে না আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে দেশ থেকে আক্রান্ত দেশসমূহে পারতপক্ষে না যেতেও আহ্বান জানান।

দ্বিতীয়ত, সন্দেহভাজন কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাকে পৃথক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন নিশ্চয়তা পেলেই তাদের বাড়ি ফিরে যেতে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চীনের উহান প্রদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা ৩০২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিশেষ ফ্লাইটে ফিরিয়ে এনে আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাড়ি ফিরে যেতে দেয়া হয়।

তৃতীয়ত, কোনো কারণে রোগটির বিস্তার ঘটলে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বিমানবন্দরের অদূরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড/ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিসহ জেলা-উপজেলায় দুটি কমিটি গঠন করে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনেক আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ।

এমইউ/এনএফ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।