খুলনায় মাছের বাজারে আকাল
জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় এক বছরের জন্য সুন্দরবন এলাকায় মাছ, মধুসহ সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বনে প্রবেশের উপরও নিষেধাজ্ঞা থাকায় যানবাহন চলাচল শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ফলে সামুদ্রিক মাছের ট্রলারগুলোও চলতে না পারায় খুলনায় মাছের আকাল শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বনের ওপর নির্ভরশীল ৩৫ লাখ মানুষ।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি সুন্দরবন সুরক্ষায় বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবে সরকার। যদিও সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছেন ইলিশসহ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী জেলেরা। তবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেশ বিপাকে পড়েছেন এই জেলেরা। সমুদ্রে যেতে না পারায় তারা মৎস্য আহরণ করতে পারছেন না। ফলে খুলনাঞ্চলে বাজারগুলোতে মৎস্য সংকট দেখা দিয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের ওপর।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক ড.সুনীল কুমার কুন্ডু জানান, সুন্দরবনে বনদস্যুরা বাঘ ও হরিণ শিকারে ঝুঁকে পড়েছে। তারা জেলে-বাওয়ালী ও ফরিয়াদের মাধ্যমে শিকার করা বাঘ-হরিণ পাচার করছে। সুন্দরবন সুরক্ষা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের নির্দেশে গত ১৮ আগস্ট বিভাগীয় উচ্চ পর্যায়ের সভায় এক বছরের জন্য বনজ সম্পদ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ওই সভায় সুন্দরবন সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ১০টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায়ের ১০টি কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, ইলিশসহ সাদা মাছ আহরণকারীদের সমুদ্রে (দূবলার চর-আলোরকোল) যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা। পশুর নদী হয়ে যারা ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে যেতেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের সামুদ্রিক মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে হলে বলেশ্বর-বগি ও চরদোয়ানী হয়ে সমুদ্রে যেতে তিনগুণ সময় বেশি লাগছে। যেখানে পশুর নদী হয়ে সমুদ্রে যেতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা, সেখানে বলেশ্বর হয়ে গেলে লাগবে ৩২ ঘণ্টা। এতো দীর্ঘ সময় মাছ বরফ দিয়ে রাখা একেবারেই অসম্ভব বলে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গেছে জেলেদের। ফলে এ অঞ্চলের বাজারগুলোতে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। সমুদ্রে যেতে না পারায় ৫০ হাজারের অধিক জেলে বেকার হতে বসেছে।
এ ব্যাপারে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের জিএম মো. আমির হোসেন জানান, নগরীর ৫ নং মাছ বাজারে বছরে ১২ থেকে ১৫ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ আসে। খুলনাঞ্চলের ইলিশ চাহিদার প্রায় ২৫ ভাগ পূরণ করে। এই বাজার থেকে সরকার বছরে ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। চলতি মৌসুমে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যেতে না পারায় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় ঢুকে পড়ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, বার্মা ও থাইল্যান্ডের জেলেরা। ইতোপূর্বে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডেরর হাতে ভারতীয় একাধিক জেলে বিপুল পরিমাণ মাছসহ গ্রেফতার হয়েছে।
এদিকে, ইলিশসহ সাদা মাছ শিকার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের পরে। একজন ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে মৎস্যজীবী আলম হাওলাদার বলেন, সরকারের রাজস্ব দিয়ে বৈধ পাস পারমিট নিয়ে তারা মাছ শিকার করতে পারছেন না। এই মৌসুমে তিনি জেলেদের ২০ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো মাছ পাননি। যে পশুর নদী দিয়ে তাদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেই নদী দিয়ে সব ধরনের জলযান চলছে। এ অবস্থায় তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
খুলনার পাইকারী মৎস্য ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মো. রমজান হাওলাদার বলেন, খুলনার মৎস্য ব্যবসায়ীরা আজ হতাশ। সমুদ্রে যেতে না পারায় তারা মাছ পাচ্ছেন না। এখন বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সামনে আরো ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে মাছ শূন্য হয়ে পড়বে খুলনার বাজার।
আলমগীর হান্নান/এসএস/পিআর