সৌদির আকস্মিক সিদ্ধান্তে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা
করোনাভাইরাস প্রবেশ ঠেকাতে সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। সৌদি সরকারের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীরা। ভিসা ফি, হোটেল ও বিমান ভাড়া বাবদ এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা।
তারা বলেন, ওমরাহর জন্য ভিসা ফি পুরোটাই চলে যায় সৌদি সরকারের তহবিলে, এ অর্থ ফেরত আনার কোনো সুযোগ নেই। হোটেল ভাড়াও ফেরত পাওয়া যাবে না। বিমান ভাড়ারও বড় একটি অংশ ফেরত পাওয়া যাবে না।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণকারীদের জন্য সৌদি প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এটা আজকে আর্লি মর্নিং করা হয়েছে। আমাদের ৫০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে।’
‘আমি সকালে সৌদি দূতবাসের সঙ্গেও কথা বলেছি। যাদের ভিসা আছে তারা যেতে পারবেন কিনা বিষয়টি অস্পষ্ট। সকালে বিমানবন্দরে যেসব যাত্রী গেছেন সবাই অপেক্ষমাণ আছেন, কারও বোর্ডিং পাস হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত মনে হচ্ছে, ভিসা তো নতুন করে ইস্যু হবেই না। যাদের ভিসা করা আছে, তারাও যেতে পারবে না।’
এজেন্সিগুলোর প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ ভিসা করা আছে জানিয়ে তসলিম বলেন, ‘এ ১০ হাজার ভিসার বিপরীতে প্রায় পাঁচ হাজার টিকিট কাটা আছে। পাঁচ হাজার টিকিটের মধ্যে দুই হাজার টিকিট লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের, যেগুলো নন-রিফান্ডেবল (ফেরত পাওয়া যাবে না)। সেখানে ৯ কোটি টাকার মতো টিকিট কাটা আছে।’
‘ভিসাগুলোর জন্য সৌদি সরকারকে ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সাধারণ ক্যারিয়ারে যে তিন হাজার টিকিট কাটা আছে সেগুলোর জন্যও আর্থিক ক্ষতি হবে। সেখানে যে হোটেল ভাড়া করা আছে, তার মূল্য আগেই পরিশোধ করতে হয়। ভিসা ফি আর হোটেল ভাড়া ফেরত পাওয়া যাবে না। হোটেল ও ভিসা মিলে মোট ক্ষতি ৩০ কোটি টাকা।’
হাব সভাপতি বলেন, ‘সব মিলে ৪০-৫০ কোটি টাকা ইনস্ট্যান্ট ব্যয় হয়েছে, যে টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এটা এখন এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীদের ক্ষতি হবে।’
সকালে যে বিমানগুলো সৌদি আরব গেছে, সেগুলো ওমরাহ যাত্রীদের নেয়নি বলেও জানান শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের টিকিট নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, যাতে এই টাকাটা ফেরত দেয়া হয়। কূটনৈতিক চ্যানেলেও আমরা চেষ্টা করব।’
‘ইতোমধ্যে প্যাসেঞ্জার অফলোডেড, ফ্লাইট চলে গেছে। আজ বেলা ১১টায়ও চট্টগ্রাম থেকে মদিনায় ফ্লাইট থাকলেও সেই ফ্লাইটগুলো ওমরাহ যাত্রীদের না নিয়েই চলে গেছে।’
গালফ ট্রাভেলের মালিক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘প্রায় ৫০০ ওমরাহ ভিসা করা আছে। আজসহ আগামী দিনগুলোতে তাদের ফ্লাইট ছিল। কিন্তু কেউই যেতে পারছে না। আমি ক্ষতির মুখে পড়ে গেলাম।’
তিনি বলেন, ওমরাহ ভিসার মেয়াদ এক মাস। এক মাসের মধ্যে খুলে দেয়া হলে হয়তো এ ভিসায় ওমরাহ করা যাবে। আবার সৌদি সরকার চাইলে পরবর্তী সময়ে এ ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েও দিতে পারবে, সবই তাদের ওপর নির্ভর করছে।’
মারওয়া ট্রাভেলের মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার কিছু ভিসা করা আছে, টিকিটও কাটা আছে। আজই আমরা আরও একশ ভিসার আবেদন করার কথা। খবর শোনার পর তড়িঘড়ি করে আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
আহসান ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘ভিসা ফি ও হোটেল ভাড়া আর হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিমান ভাড়াটা ফেরত পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে।’
আরএমএম/এএইচ/জেআইএম