দুদক বিরোধীদের হয়রানি করে, ক্ষমতাসীনদের প্রতি নমনীয় : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর ফলোআপ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের কার্যক্রম ও ক্ষমতার ব্যবহারের কারণে এর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

টিআইবি বলছে, দুদকবিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি করা এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয় প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দুদকের কার্যক্রমে।

দুদক রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। কারণ দুর্নীতির ঘটনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ আচরণ পেতে সমর্থ হয়নি বলেও জানিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটির মতে, কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সকলের বিরুদ্ধে সমানতালে পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। তথ্যদাতাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাদের বেশিরভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত। তবে কয়েকজন রয়েছেন যারা ক্ষমতাসীন দলের সদস্য।

দুদকের কর্ম সম্পাদনের স্বাধীনতাও কিছুটা নিম্ন বলেছে টিআইবি। এ বিষয়ে সংস্থাটির ভাষ্য, কিছু ক্ষেত্রে দুদক সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের চাপের সম্মুখীন থাকে। আর কিছু ক্ষেত্রে সরকারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য দুদক নিজস্ব ধারাপ্রসূত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা থেকে বিরত থাকে।

 

 

দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সাড়া প্রদানের হার কম হওয়ার একটি কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দুদকের অভিযোগ বাছাই ব্যবস্থা। দেখা গেছে, ২০১৬-২০১৮ সালে মোট ৪৭ হাজার ৫৪৯টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ২০৯টি অভিযোগ (৬.৭৫%) অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এই হার ৬৬ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা।

তবে দুদকের মতে, অধিকাংশ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে না। এছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২ হাজার ৩৬৯টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দুদক ২০১৬-২০১৮ সালে ৪ হাজার ৩৮টি অনুসন্ধানের মধ্য থেকে ৮৪৮টি (২১%) মামলা করেছ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ৭৫ শতাংশের বেশি।

অপরদিকে, গত কয়েক বছরে দুদকের দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার হার গড়ে ৪০ থেকে বেড়ে ৫৭.৭% হলেও তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে (৭৫ শতাংশের বেশি) এখনও কম।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি জানায়, গত তিন বছরে (২০১৬-১৮) নিস্পত্তি হওয়া ৮৫৭টি মামলার মধ্যে মোট ৪৯৫টি মামলায় সাজার রায় হয়েছে। এ ধরনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুদকের নিরপেক্ষতার বিষয়ে মানুষের ধারণা খুব ইতিবাচক নয়। দুদকের কর্মকর্তাদের ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের সদস্য ও সাংবাদিকদের মতে, দুদককে দু্নীতি দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা অর্পণ করা হলেও একই ধরনের দুনীতির মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ নয়।

টিআইবি বলছে, জনগণের ধারণায় দুদক ক্ষুদ্র দুর্নীতির ওপর বেশি মনোযোগী এবং বড় দু্র্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দুদকের দৃশ্যমান সাফল্য নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কাগজে-কলমে দুদকের স্বাধীন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দুদক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে অনুমতি নেয়ার যে বিষয় রয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। আমরা আশা করি, আদালতে এই ধারাটি বাতিল হবে।

এআর/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।