বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ লাইসেন্সে আইসিইউ সিসিইউ
দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চলছে তুঘলগি কারবার। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ছোটখাট আকারের হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার সাধারণ লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ, কিডনি ডায়ালাইসিস ও ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এ ধরনের বিশেষায়িত ও স্পর্শকাতর ইউনিট খোলার জন্য ডাক্তার, নার্সসহ প্রশিক্ষিত জনবল ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থাকা অত্যাবশ্যক।
অভিযোগ উঠেছে সাধারণ লাইসেন্স থাকার তথ্য গোপন করে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ছাড়া বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদানের নামে রমরমা ব্যবসা খুলে বসেছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই সব হাসপাতালে সুচিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর এ ব্যাপারে এতদিন নিশ্চুপ ছিলেন।
তবে বিলম্বে হলেও এখন ঘুম ভেঙ্গেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের। এবার তারা প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সেবার ধরন, চিকিৎসক ও নার্সসহ কর্মরত মোট জনবল ও ব্যবহৃত চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সংখ্যা জানতে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম ২৯ সেপ্টেম্বর এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি আকারে দেয়া চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কোন কোন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নির্দিষ্ট সংখ্যক শয্যা বিশিষ্ট সাধারণ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স গ্রহণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিনা অনুমতিতে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা (আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ, কিডনি ডায়ালাইসিস,ডায়াবেটিস ও মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র) কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
তিনি বলেন, এসব সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবে কখনও কখনও অনাকাঙ্খিত ঘটনার উদ্ভব হচ্ছে। তাছাড়া সঠিক তথ্যের অভাবে এসব সেবা প্রদানের বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণে সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে পরবর্তী ১০দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানে সেবার ধরন, চিকিৎসক ও নার্সসহ কর্মরত মোট জনবল ও ব্যবহৃত চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সংখ্যা জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি লালমাটিয়ার এশিয়ান হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সের ছয় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। এছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে ভাংচুর ও কর্মকর্তাদের মারধোর করে রোগীর স্বজনরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিসেস (এমআইএস) প্রকাশিত সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০১৪ এর তথ্যানুসারে বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বৈধ লাইসেন্সধারি ২ হাজার ৯৮৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ও ৫ হাজার ২২০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তবে রাজধানীসহ সারাদেশে সমপরিমাণের চেয়ে বেশী সংখ্যক লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এমইউ/এআরএস/পিআর