কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নির্যাতন করা হয় সেই গৃহকর্মীকে


প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় কিশোরী গৃহকর্মীকে বর্বর নির্যাতনের নেপথ্য কারণ কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়া। খারাপ কাজে রাজি না হওয়ায় মেয়েটিকে প্রায় তিন মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। প্রায় এক বছর ধরে তার ওপর চলে বর্বরোচিত নির্যাতন। তারপর বিনা চিকিৎসায় ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। প্রতিদিন রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটানো হতো। এছাড়া গরম পানি ও খুনতির ছেকা দিয়েও নির্যাতন করা হতো মেয়েটিকে।

পরিবারের সদস্যরা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় কিশোরী ওই গৃহকর্মীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েটি হাসপাতালের চতুর্থতলার ৬নং ওয়ার্ডের ৭নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেয়েটির অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।

বুধবার বিকেলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত গৃহকর্মীর সঙ্গে কথা হয়। গুরুতর অসুস্থ গৃহকর্মী নাজমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বর্বর এ ঘটনার বর্ণনা দেন। নাজমা জাগো নিউজকে জানান, ঘটনার শুরু হয় রমজান মাস থেকে। আমাকে আমার বাড়ি থেকে রাবেয়া বেগমের বাড়িতে কাজের কথা বলে নেয়া হয় এক বছর হবে। কিছু দিন পর রাবেয়া বেগম আমাকে নিয়ে তার মেয়ে লুৎফা বেগমের শ্বশুর বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে নিয়ে সেখানে কাজ করার কথা বলেন। রমজান মাসের একদিন লুৎফা অপরিচিত চার জন যুবকে নিয়ে আসেন বাসায়। এ সময় তিনি তাদের সঙ্গে আমাকে খারাপ কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি এতে রাজি না হয়ে বাসা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

নাজমা আরো জানান, এসময় যুবকদের সহযোগিতায় লুৎফা আমাকে ধরে এনে নির্যাতন করেন। আমাকে নির্যাতন করার সময় তার মা রাবেয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বাধা দেননি। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি আমাকে আমার বাবার কাছে দিয়ে আসার জন্য কিন্তু পরদিন সকালে রাবেয়া আমাকে রেখে বড়লেখায় চলে যান।

এরপর গৃহবন্দি করে আমার ওপর চলে অনেক নির্যাতন কিন্তু তারা আমাকে চিকিৎসা করায়নি। গত দুই মাস পূর্বে লাকসামের বাসার পার্শ্ববর্তী লোকজন ঘটনা বুঝতে পারায় আমাকে গোপনে বড়লেখায় নিয়ে আসা হয়। বড়লেখায় অনার পরও আমাকে গৃহবন্দি করে নির্যাতন করা হয়।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার বড়লেখা থানায় তিনজনকে আসামিকে করে একটি মামলা দায়ের করেন নাজমার বাবা মনছুর আলী। মামলার আসামিরা হলেন পাঁচপাড়া গ্রামের আজির উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৬০), মেয়ে লুৎফা বেগম (৩০), রাবেয়ার জা রুবী বেগম (৪০)।

নাজমার বাবার দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাৎক্ষণিক গৃহকত্র্র্র্রী রাবেয়া বেগমকে গ্রেফতার করেছে। বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত রাবেয়া বেগম থানায় পুলিশের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। এ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিছরাবন্দ গ্রামের হতদরিদ্র মনসুর আলী অভাবের তাড়নায় মেয়ে নাজমা বেগমকে দুই হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মীর কাজে দেন পাঁচপাড়া গ্রামের আজির উদ্দিনের বাড়িতে। প্রায় এক বছর পূর্বে মেয়টিকে (নাজমাকে) ঝিয়ের কাজের জন্য আজির উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম নিজ জিম্মায় তার বাড়িতে নিয়ে যান।

এর প্রায় তিন মাস পর নাজমার পরিবারের অনুমতি ছাড়াই তাকে নিজের মেয়ে লুৎফার শশুর বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে পাঠিয়ে দেন রাবেয়া বেগম। সেখানে রাবেয়ার মেয়ে লুৎফা বেগম নাজমাকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নাজমা এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন।

## কিশোরী গৃহকর্মীর প্রতি এ কেমন বর্বরতা!

ছামির মাহমুদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।