একটি রাত আটটি লাশ ও বাক্সবন্দি স্বপ্ন
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সৌদি আরব থেকে ফিরেছে দুই নারীসহ আট প্রবাসীর মরদেহ। যারা সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন, স্বজনের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। অথচ সেসব স্বপ্নকে বাক্সবন্দি করে নিথর দেহে ফিরলেন তারা। তাদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে পাঁচজন ও মালয়েশিয়া থেকে তিনজনের মরদেহ দেশে ফিরেছে।
নিজেদের বিন্দু বিন্দু শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের লাশ বুধবার রাতে যখন দেশের মাটি স্পর্শ করেছিল, তখন তাদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বিমানবন্দর এলাকা।
সৌদিতে দেড় বছর ধরে কাজ করছিলেন সুনামগঞ্জের রিপা আক্তার। চাকরি করে স্বামী সন্তানদের জন্য টাকাও পাঠাতেন নিয়মিত। কিন্তু হঠাৎই একদিন সৌদি থেকে ফোন করে তার বাড়িতে জানানো হয়, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন রিপা।
রিপার বড় ভাই আব্দুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বামীর আয় ভালো ছিল না। সন্তানদের কথা ভেবে সৌদি গিয়েছিল রিপা। কিন্তু তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারিছ না। রিপা নেই জানি তা কয়েকমাস আগে থেকেই জানি। কিন্তু কাল যখন লাশটা বিমানবন্দর দিয়ে বের হলো, বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল, নিজের ছোটবোনের মরণের সময় তার পাশে থাকতে পারলাম না। না জানি কত কষ্ট নিয়ে সে পৃথিবী ছেড়ে গেছে!’
রিপার সঙ্গে একই ফ্লাইটে নিথর দেহে ফিরেছেন আরেক রেমিট্যান্স যোদ্ধা রোকসানা বেগম (৪০)। তার ভাই রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০-১১ মাস আগে রোকসানা সৌদি আরবে যান কাজ করতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছুদিন কাজ করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাকে আর কাজে রাখতে রাজি হয়নি সৌদি মালিক। কাজ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার জন্য রোকসানা দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে দূতাবাস থেকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি মারা যায়। এ বিষয়ে দূতাবাস সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
নিহত রুকসানার একটি ১৬ বছরের মেয়ে রয়েছে বলে জানান রাসেল।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আমার বোনের মতো আরও কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ ফিরেছে বুধবার রাতে। কয়েকজনের পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে মনে হলো আমাদের সবার একই গল্প। কান্না ছাড়া আমাদের আর কোনো সম্বল নেই।
ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এ পর্যন্ত এভাবে বাক্সবন্দি হয়ে ৪০৯ জন রেমিট্যান্স যোদ্ধা নিথর দেহে দেশে ফিরেছেন।
জেপি/এসআর/এমকেএইচ