চীনা ফ্লাইট যাচ্ছে ‘ফাঁকা’, আসার যাত্রীও কম

আদনান রহমান
আদনান রহমান আদনান রহমান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৮ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চীনের প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ-চীন রুটে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে যাত্রী। এয়ারলাইন্সগুলো এরইমধ্যে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। এরপরও যাত্রী কম হওয়ার কারণে কম যাত্রী নিয়ে এই রুটে ফ্লাইট চালানো নিয়েই এখন সংশয়ে রয়েছে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

জানুয়ারির শুরুতে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন এই করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে পাড়ি দিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকা। সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৭৪ জন, এরমধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ডেই রয়েছেন ৫৯ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে চীনে মারা গেছেন ১৩৬৭ জন। মোট মারা গেছেন ১৩৬৯ জন। এ দুজনের একজন মারা গেছের হংকংয়ে ও আরেকজন ফিলিপাইনে।

বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত কারও দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। সংক্রমণ ঠেকাতে শুরু থেকেই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ থেকে চীনে মোট ৪টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। এদের মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স অন্যতম। এছাড়াও ড্রাগন এয়ার (ক্যাথে প্যাসিফিক) হংকং হয়ে চীনের বেশ কয়েকটি শহরে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ থেকে গুয়াঞ্জুতে সরাসরি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এয়ারক্রাফটি সপ্তাহে ৭ দিন যায়। এতে বিজনেস ক্লাসের ১২টিসহ মোট ১৭৪টি আসন রয়েছে। ২১ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা থেকে গুয়াঞ্জু যাওয়ার ফ্লাইটটির গড় যাত্রী ছিলেন ৪০ জন। আর গুয়াঞ্জু থেকে ঢাকা ফিরেছেন গড়ে ১১৮ জন করে যাত্রী।

বাংলাদেশ থেকে চীনের কুনমিংয়ে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতো চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স। এই রুটে সপ্তাহে ৭ দিন ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বর্তমানে তা কমিয়ে তিন দিন করেছে। বর্তমানে তারা শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরপরও তাদের যাত্রী সংখ্যা কম।

চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের স্টেশন সুপারভাইজার হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘যাত্রী সংখ্যা কমার কারণে ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে। বর্তমানে এই রুটে গড়ে ১০০-এর কম যাত্রী আসা যাওয়া করছেন।’

এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীন রুটে যাত্রী অনেকটাই কমেছে। তবে বাংলাদেশি অনেকেই এখনও দেশে ফিরছেন। তাদের স্বার্থে আগের মতো সপ্তাহে ৭ দিনই ফ্লাইট চলাচল অব্যাহত রাখবে ইউএস-বাংলা।’

চীনের গুয়াঞ্জুতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স। যাত্রী সংকটের কারণে সপ্তাহের ৭ দিন থেকে কমিয়ে শুধুমাত্র সোমবার, বুধবার, শুক্রবার ও রোববার ফ্লাইট পরিচালনা করবে তারা। প্রতিষ্ঠানটি এই রুটে আগে এয়ারবাস এ-৩৩০ মডেলের এয়ারক্রাফট চালাত। এতে ২৮০টি আসন ছিল। ফ্লাইট সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি বিমানের আকার ছোট করেছে তারা। বর্তমানে এই রুটে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট চলছে। এর আসনসংখ্যা ১৭৪টি। তবুও যাত্রী পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে চীন থেকে আসা যাত্রী-পাইলট ও ক্রুদের বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে না এনে বিকল্প বিশেষ পথ থেকে ইমিগ্রেশন করিয়ে বিমানবন্দরে আনা হচ্ছে। প্রতিটি ফ্লাইটের পাইলট-কেবিন ক্রুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রু জানান, চীনা ফ্লাইট থেকে ফিরে আসার সময় আমাদের গায়ে যেসব জামাকাপড় রয়েছে, এগুলো এয়ারপোর্টেই রেখে যেতে হচ্ছে। কাপড় বদলে এয়ারপোর্ট ছাড়তে হচ্ছে আমাদের।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ-আল-আহসান জাগো নিউজকে বলেন, চীন থেকে যাত্রী, পাইলট-ক্রু সবাইকে একসাথে পৃথক গেট দিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকানো হচ্ছে। সবাইকেই একই পন্থায় স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে চীনের রুটের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার অন্যান্য দেশের ফ্লাইটেও। ট্যুর অপারেটরগুলো বলছে, গত ২ মাসে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনকেন্দ্রিক দেশগুলোতে উদ্বেগজনকহারে যাত্রী কমেছে। গতবছরের তুলনায় এবছর একই সময়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার, ভুটান, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে যাত্রীদের আসা-যাওয়া কমেছে ৭০ ভাগ।

এআর/এনএফ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।