নিজামীর ফাঁসির আদেশ (ভিডিও)


প্রকাশিত: ০৬:২৫ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এ সময় প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের আইনজীবী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে নিজামীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

 

বিচারে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ আনা হয়। এরমধ্যে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ৮টি মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬নং অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একই বছরের ২২ আগস্ট নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল-মাদানি স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি এ সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তারা সারাদেশে সংগঠিত হয়ে অপরাধ করতে থাকেন। যার দায় নিজামীর।

৪নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একই বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডি হলে ছাত্রসংঘের সভায় তিনি জিহাদের সমর্থনে বক্তব্য দেন। নিজামী ওই সভায় বক্তব্য দিয়ে নিরীহ স্বাধীনতাকামী বাঙালি হত্যার নির্দেশ দেন।

৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় একই বছরের ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়। নারীদের ধর্ষণ করা হয়।

১৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজামী একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি ট্রাইব্যুনালের দশম রায়। আর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে এটিই প্রথম রায়।

এ রায়ের মধ্য দিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা মামলাটির নিষ্পত্তি হলো।

এর আগে গত ২৪ জুন মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল।  তবে ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীকে হাজির না করে তিনি অসুস্থ বলে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন পাঠায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়। তবে রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। ৫৩ দিন পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শোনেন। ২৪ মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়।

তিন মাস পর গত ২৪ জুন এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীকে হাজির না করে তিনি অসুস্থ বলে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এর পর থেকে তৃতীয় দফায় মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়।

এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ১০  ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খানের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন। আর নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন চারজন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।