হটলাইনে ফোন করেও উত্তর মিলছে না
জেসমিন পাপড়ি জেসমিন পাপড়ি , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০৯ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২০
করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশে ফিরতে চান চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তবে দূতাবাসের হটলাইনে ফোন করেও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন চীনে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সু্স্থ এবং সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজখবর রাখছে। তবে চীন থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, দূতাবাস থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন না। এমনকি সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের সহায়তায় খোলা হটলাইনে যোগাযোগ করলেও অনেকের ফোন ধরা হচ্ছে না।
ইউনান প্রদেশের ডালি থেকে জিনিয়া জাহান নামের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখানে সবাই রুমবন্দি। বাইরে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাইরে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে। ফলে রুমে যা আছে সেটাই খেতে হচ্ছে। রুমের খাবারও শেষ হয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান হওয়ায় সবাই ওই শহরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু ডালি শহরেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ৩৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি উহান শহর থেকে ডালিতে এসেছিলেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
জিনিয়া বলেন, আমি দেশে ফিরতে চাই। এতো অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির মধ্যে এক মুহূর্তও থাকতে চাই না। ভারত এমনকি নেপালের মতো দেশও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। অথচ আমরা দূতাবাসের হটলাইনে ফোন করেও কোনো উত্তর পাই না।
ডালি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী বলেন, চীনের এ পরিস্থিতি জানতে পেরে দেশে আমার মা সারাক্ষণ কাঁদছে। আমি দেশে ফিরতে চাই।
চীনের ঝিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মনিম আহমেদ জানান, গত কয়েক দিনে দূতাবাসে কয়েকবার ফোন করেছি। কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি।
এর আগে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাকিবুল তূর্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, প্রায় ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উহানে আটকা পড়েছে। আমরা চাইলেও এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছি না।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। চীন সরকার এখনো বিদেশিদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তাছাড়া শহরের ‘লকডাউন’ তোলার বিষয়েও কোনো সময়সীমা জানায়নি।
দূতাবাস বাংলাদেশিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি উহানের বিমানবন্দর বন্ধ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দূতাবাসের হটলাইনে অন্তত একশ কল পেয়েছি। যার বেশিরভাগই উহান প্রদেশের।
তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে আমরা সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে পারিনি। তবে আমরা আমাদের কমিউনিটিকে বিভিন্ন ইউচ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে চীন সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উহানসহ চীনজুড়ে থাকা শিক্ষার্থীরা তাদের সরিয়ে নেয়া এবং খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটানোর কথা জানতে চেয়েছেন বারবার। আমরা এ দুটি বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, উহানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় লোকজনকে নির্দিষ্ট বাসে বিশেষ কিছু স্টোরে নিয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে।'
মিশনের ডেপুটি চিফ মাসুদুর রহমান জানান, চীনে সব মিলিয়ে তিন হাজার বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে উহানে তিনশ জনসহ পুরো হুয়াই প্রদেশে পাঁচশ। তবে কোনো বাংলাদেশি আক্রান্ত হননি।
করোনাভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত ৫৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে বলে দেশগুলো নিশ্চিত করেছে।
জেপি/এএইচ/জেআইএম