নামেই মাত্র সরকারি মডেল বিদ্যালয়


প্রকাশিত: ১১:২৮ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৫

নামেই মাত্র বাবুরহাট সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষার ফলাফলে নাজুক। নীলফামারীর ডিমলায় সদর ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে বাবুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বিদ্যালয়টিতে ১২ জন নারী শিক্ষকসহ কর্মরত রয়েছেন ১৪ জন শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬৩ জন।

২০১৪ সালের প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮৬ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ একজন না পেলেও অকৃতকার্য হয়েছে ১৬ জন পরীক্ষার্থী। সহকারী শিক্ষকদের ছেলে মেয়েরা পার্শ্ববর্তী কিন্ডার গার্ডেন (কেজি) বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। সরকারিভাবে সকল শিক্ষকদের ছেলে-মেয়ে নিজ বিদ্যালয়ে পড়াশুনার নিয়ম থাকলেও কেউ তা মানছেন না।

সকাল ৯টা থেকে ১০টায় সহকারী শিক্ষকদের পার্শ্ববর্তী কেজি বিদ্যালয়ে নিজ সন্তানদের আনতে দেখা যায়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বাবুরহাট মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়টির এ গ্রেড পেয়েছে ২০ জন, এ মাইনাস (-) পেয়েছে ১০ জন, বি গ্রেড পেয়েছে ১৩ জন, সি গ্রেড ২৩ জন, ডি গ্রেড পেয়েছে ৪ জন পরীক্ষার্থী। উপজেলা শিক্ষা বিভাগের মাত্র ১শ গজ দূরুত্বের মধ্যে বিদ্যালয়টির অবস্থান হলেও প্রশাসনিক উদাসীনতা আর শিক্ষকদের শিক্ষাদানে ফাঁকির কারণে বিদ্যালয়টি থেকে শতভাগ পাশ তো দূরের কথা একজন পরীক্ষার্থীও বৃত্তি পায়নি।

দিনদিন শিক্ষা ব্যবস্থা চরম অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ দেশের মডেল প্রাথমিক  বিদ্যালয়গুলোকে সরকার দিয়েছেন বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। সরকারের দেয়া সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করলেও বিদ্যালয়টি সকল শিক্ষকগরা শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় গুরুত্ব না দিয়ে কিভাবে নিজের আখের গুছানো যাবে সে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে ক্লাশের পরিবর্তে আড্ডা, সাংসারিক বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে খোশ গল্পে ব্যস্ত থাকেন। অভিভাবকদের অভিযোগ নিজেদের সন্তানদেরকে শিক্ষিত করতে শিক্ষকরা পার্শ্ববর্তী কেজি স্কুলে পাঠান।  

প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান অফিসে বসে থাকনে। প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় ক্লাসে শিক্ষক থাকেন না।  প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের ২/৩টি ক্লাশের পর আর ক্লাশ হয় না। বিদ্যালয়ের আশ-পাশেই শিক্ষকদের বাড়ি হওয়ায় দুপুরে  শিক্ষকরা বাড়ি গেলে বিকেলে আর বিদ্যালয়ে আসেন না।

একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ম্যাডাম (সহকারী শিক্ষক) ক্লাসে এসে বই দেখে দিয়ে শিক্ষকদের অফিস রুমে বসে গল্প করেন। যে দুই একজন ক্লাশে থাকেন তারা চেয়ারে বসে থেকে শিক্ষার্থীদের পড়াতে বলেন।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান লেবু জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকদের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিদ্যালয়টির সমাপণী পরীক্ষার ফলাফল ভালো করা যাচ্ছে না। অনেক সহকারী শিক্ষক ১৫-১৬ বছর থেকে এখানে চাকরি করায় চাকরির প্রতি তাদের অনিহা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষকদের ছেলে-মেয়েদের কেজি স্কুলে পড়াশুনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষকদের ফাঁকিবাজি করে স্কুল পরিচালনার কারণে তাদের ছেলে-মেয়েদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন না। বার বার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে কেউ কর্ণপাত করছেন না।

ডিমলা উপজেলা প্রাখমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাবুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাশ ফাঁকি দেয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি থেকে অন্য বিদ্যালয়গুলো যা শিখবে তা দুঃখজনক।

তিনি স্বীকার করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেই ঠিকমত পড়াশুনা করাতে পারেন না মর্মে পার্শ্ববর্তী কেজি বিদ্যালয়ে নিজেদের ছেলেমেয়েকে পড়াশুনা করান।

জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।