সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী পদ্মভূষণে ভূষিত, এনামুল হককে পদ্মশ্রী
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসা প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পেয়েছেন। আর প্রত্নতত্ত্ববিদ, লেখক ও বাংলাদেশে জাদুঘর আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. এনামুল হক ভূষিত হয়েছেন চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’তে।
ভারতের ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তথ্য বিবরণীতে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এতে ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মশ্রী’র পাশাপাশি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মবিভূষণ’ জয়ীদের নামও ঘোষণা করা হয়।
এবার ‘পদ্মবিভূষণ’ পেয়েছেন ৭ জন, ‘পদ্মভূষণ’ ১৬ জন এবং ‘পদ্মশ্রী’ পেয়েছেন ১১৮ জন। এর মধ্যে ৩৩ জন নারী। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৮ জন বিদেশি, অনাবাসী ভারতীয়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক অথবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমন বিদেশি নাগরিক যারা আবার ভারতেই বাস করছেন- তারা রয়েছেন। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীসহ ১২ জন মরণোত্তর পুরস্কৃত হয়েছেন।
ভারতে পাঁচ বছর হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসরের ১০ দিন না পেরোতেই সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী গত ৩০ ডিসেম্বর প্রয়াত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় এমএসসি ডিগ্রিধারী সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস এক্সামিনেশনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে স্বাধীন বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেন।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন, ওয়ারসো, নয়াদিল্লি ও জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
মোয়াজ্জেম আলী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ২০০১ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দেয়, তা আদায়ের প্রক্রিয়ায় ওই সময় ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন মোয়াজ্জেম আলী।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে মোয়াজ্জেম আলীর অবদানকে স্মরণ করা হয়।
আর এনামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর যুক্ত হন প্রত্নতত্ত্ব গবেষণার কাজে।
কর্মজীবনে এনামুল হক ১৯৬২ সালে ঢাকা জাদুঘরে যোগদান করে ১৯৬৫ সালে অধ্যক্ষ, ১৯৬৯ সালে পরিচালক এবং ১৯৮৩-৯১ মেয়াদে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩-৮৯ মেয়াদে আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদের এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সংস্থার সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নিযুক্ত হন। বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এবং বার্ষিক জার্নাল অব বেঙ্গল আর্টের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এনামুল হক জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘরে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণায় অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ‘একুশে পদক’, ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এছাড়া ২০১২ সালে ভারতের চেন্নাইয়ের ‘রীচ ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড’সহ দেশে-বিদেশে অনেক সম্মাননায় ভূষিত হন এনামুল হক।
সাধারণত প্রতিবছরের মার্চ-এপ্রিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব সম্মাননা তুলে দেন। এবারও রাষ্ট্রপতি ভবনে সুবিধাজনক সময়ে সম্মাননায় ভূষিত ব্যক্তি বা তাদের পক্ষে প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
এইচএ/এমএসএইচ