‘কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের চাইতে কর্ণফুলী নদী অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে। বন্দরের লাইফলাইন হলো এ নদী। নদী না থাকলে বন্দরও থাকবে না। চট্টগ্রামের যে সভ্যতা তা এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।’

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মপন্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম আমার এলাকা। এখানে আমার শেকড় আছে। ৬৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কে আমার জানাশোনা। ৯০-৯১ সালে যখন আমি মন্ত্রণালয়ে যুক্ত ছিলাম, তখন নির্দেশনা দিয়েছিলাম যেন কর্ণফুলী নদীর দুই পাশের জায়গা কাউকে লিজ দেয়া না হয়। পরবর্তিতে সে নির্দেশনা ফলো করা হয়নি। এখন কর্ণফুলী নদীকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে শ্বাসরোধ করে ফেলা হয়েছে। তাই নদীকে বাঁচাতে হবে।

কর্ণফুলী নদী পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, কালুরঘাট সেতুর কারণে বাকলিয়া চরের জন্ম। ভবিষ্যতে নতুন কোনো ব্রিজ হলে যাতে নদীতে সে ধরনের কোনো প্রভাব না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব সমস্যা এড়ানো যায় কিনা সে চেষ্টা করতে হবে।

এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট পয়েন্টে বালু উত্তোলন ও নদী ভাঙনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জানান, ঢাকায় গিয়েই নদী রক্ষা কমিশনকে কর্ণফুলী নদী পরিদর্শনে পাঠাবেন।

ctg-port-(1).jpg

কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং বন্ধ থাকার বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্যের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং বন্ধ আছে। প্রথমে গ্র্যাব ড্রেজার দিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিং হবে। কর্ণফুলী হলো পৃথিবীর একমাত্র নদী যেখানে উজানের পানি এসে সব বর্জ্য পরিষ্কার করে ফেলে।

তিনি বলেন, নদীগুলো থেকে যাতে বর্জ্য কর্ণফুলীতে আসতে না পারে, সে লক্ষ্যে সব খালের মুখে স্টিলের নেট দিতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী ড্রেজিং রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। সিডিএ ও সিটি করপোরেশন দেখবেন, যাতে খালের বর্জ্য নদীতে না আসে।

বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটি আর মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। আজ এখানে আরও বড় মাপের কেউ থাকলে তিনি সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। আমরা সুপারিশ করতে পারব। শিপিং মিনিস্ট্রি ও ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রি এক সাথে কাজ করলে বন্দরে কাস্টমস কেন্দ্রিক সমস্যা থাকবে না।

কাস্টমসের লিমিটেশন আছে উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দেখায় কাস্টমস এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এখন বন্দর ও কাস্টমস বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। কাস্টমস অনুধাবন করতে পারছে না তারা কোথায় পিছিয়ে আছে। আমি মনে করি, আপনারা যখন উন্নত বন্দর পরিদর্শনে যান, তখন কাস্টমসের প্রতিনিধিদেরও সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। এতে তারা উন্নত দেশের কাস্টমস কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ctg-port-(1).jpg

মতবিনিময় সভায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, এস এম শাহজাদা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুছ ছাত্তার, উপ সচিব বেগম মালেকা পারভীন, ড. দয়াল চাঁদ মণ্ডল, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপপরিচালক আবদুল জব্বার, সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম আমিনুল ইসলাম, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, বিজিএমইএর প্রথম সহ সভাপতি এমএ সালাম, চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম, সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান চৌধুরী, হারবার মেরিন কমডোর শফিউল বারী, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান, সচিব মো. ওমর ফারুক, ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান, উপ সচিব আজিজুল মওলা, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী, বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী, বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজনসহ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্টক হোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।

আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।