এবারও কমবে নারী ভোটার


প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫

ভোটার তালিকা হালনাগাদের এই সময়ে এবারও নারী ভোটার কমার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নারী ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশব্যাপী চলমান হালনাগাদের (প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ) তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সর্বশেষ হালনাগাদে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার কম ছিল।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ জাগো নিউজকে বলেন, নারীরা যাতে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এত উদ্যোগ নেয়ার পরও কেন পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটার কম হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় পুরুষের চেয়ে নারী এগিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে সর্বশেষ হালনাগাদে হঠাৎ পুরুষ ভোটার বেড়ে যায়। এ নিয়ে কমিশন নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। দেশের যেসব স্থানে নারী ভোটার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল, সেসব স্থানে তদন্ত টিম পাঠিয়ে তদন্ত করা হয়। ওই তদন্তে নারী ভোটার কম হওয়ার পেছনে ৭টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- অনেক এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীরা ঠিকমতো বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না, মাঠ পর্যায়ে প্রচারণার ব্যাপক ঘাটতি, রক্ষণশীলতার কারণে গ্রামাঞ্চলের নারী ভোটাররা ছবি তোলার ভয়ে ভোটার হচ্ছেন না এবং জন্মসনদ সংগ্রহে অতিরিক্ত ফি প্রদান ও জটিলতা। অন্যদিকে, গ্রামাঞ্চলের অনেক নারী শহরে পোশাকশিল্পে কাজ করতে যাওয়ায় তারা ভোটার হচ্ছেন না, সুষ্ঠুভাবে তদারকি না হওয়ায় অনেক এলাকায় অস্বাভাবিক ভোটার বেড়েছে, আবার অনেক এলাকায় কমেছে।

গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া হালনাগাদে যাতে নারী ভোটার কম না হয় তার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেয় ইসি। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে হালনাগাদ শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে শেষ ধাপের হালনাগাদ। প্রথম ধাপে প্রায় ১ লাখের মতো পুরুষ ভোটার বেশি হয়েছে। আর দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৩০টির মতো উপজেলায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার প্রায় ১০ হাজার কম হয়েছে।

প্রথম ধাপে ১৮৯টি উপজেলায় ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয় ১৫ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৩৩ হাজার এবং নারী ৭ লাখ ৪৭ হাজার। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে ২৬টি উপজেলায় ৩৮ হাজার ভোটারের মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার এবং নারী ১৫ হাজার। অর্থাৎ প্রতিটি ধাপে নারী ভোটার কমেছে।

রাজধানীসহ তৃতীয় ধাপের ১৩৬ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ শেষে শুরু হয়েছে ছবি তুলে নাম নিবন্ধনের কাজ। এ ধাপেও নারী ভোটার কম হচ্ছে বলে রাজধানীর জিগাতলাসহ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

ইসির তথ্যমতে, সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার ৭ লাখ ৪ হাজার জন কম ছিল। ৬৪টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধান দেখা যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও ভোলায়।

এর আগে ২০০৮ সালে দেশের ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি ছিল ১৪ লাখ ১৩ হাজার। এরপর থেকে প্রতি বছরের হালনাগাদে নারী ভোটারের সংখ্যা ক্রমেই কমেছে। ২০১৩ সালে হালনাগাদ শেষে দেখা গেছে, নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার বেশি।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ মোহাম্মদ মূসা বলেন, নারী ভোটার বাড়াতে ঈদুল আজহার ছুটির আগেই সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশন সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এ বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য। এরপর যদি পুরুষ-নারী ভোটারের মধ্যে ব্যবধান থেকে যায়, তাহলে রিভাইজ কমিটি তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এইচএস/এসএইচএস/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।