নিরাপত্তার অজুহাতে বাতিল হয়েছিলো যেসব সফর


প্রকাশিত: ০৫:৩৮ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫

নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে প্রস্তাবিত দুই টেস্টের সিরিজের জন্য সদ্য বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। নিরাপত্তার কারণে সফর ও ম্যাচ স্থগিত বা বাতিলের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবারই ঘটেছে এমন ঘটনা। নিরাপত্তার কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক সিরিজ বা ম্যাচই শেষ পর্যন্ত আর মাঠে গড়ায়নি। জেনে নেয়া যাক মাঠে গড়ানোর আগে ভেস্তে যাওয়া সেইসব সিরিজ বা ম্যাচগুলো সম্পর্কে।

১. ১৯৯৬ ওয়ানডে বিশ্বকাপ স্মৃতি এখন বেশ পুরনো। কিন্তু ক্রিকেট পাগল পাঠকদের মনে ঐ স্মৃতিটি হয়তো এখনো বেশ তরতাজা। ঐ আসরের বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে শ্রীলংকার কলম্বোর সেন্ট্রাল ব্যাংকে বোমা হামলা চালায় তামিল টাইগাররা। ঐ হামলায় ৯১ জন নিহত ও ১৪শ’ মানুষ আহত হয়।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার কারণে শ্রীলংকার মাটিতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের ম্যাচগুলো খেলতে অস্বীকৃতি জানায় অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দু’টি ম্যাচই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ফলে এ দু’টি ম্যাচ থেকে ওয়াকওভার পেয়ে যায় শ্রীলংকা।

২. ২০০২ সালে সিরিজ বাতিলের ঘটনা প্রথম ঘটে। ওই বছরের এপ্রিল মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে দু’টি টেস্ট খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু সফর শুরুর এক মাস আগে অর্থাৎ মার্চে জিম্বাবুয়ের সফর বাতিলের ঘোষণা দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কারণ সফর শুরুর এক মাস আগে পুনরায় জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বির্তকিত রবার্ট মুগাবে। তাতে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করে জিম্বাবুয়েতে। তাই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে জিম্বাবুয়ে সফর বাতিলের ঘোষণা দেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় মন্ত্রী অ্যালেক্স ডাউনার।

স্থগিত হওয়া সিরিজটি ২০০৪ সালে আয়োজনের আশ্বাসও দেয় অস্ট্রেলিয়া। সেই সঙ্গে দু’টি টেস্টের সাথে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচও যোগ করা হয়। কিন্তু মুগাবেকে স্বীকৃতি দেয়া হবে বিবেচনা করে ২০০৪ সালের পুনঃনির্ধারিত সূচিও বাতিল করেছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল।

৩. ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া। এ আসরে নিরাত্তার অজুহাত দেখিয়েই জিম্বাবুয়ের মাটিতে একটি ম্যাচ খেলেনি ইংল্যান্ড। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ইংলিশরা। ফলে ঐ ম্যাচটি ওয়াকওভার পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।

৪. ২০০২ সালে পাকিস্তান সফরই বাতিল করে দেয় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। সফর শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে বোমা হামলায় করাচিতে ১২ ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান সফরেই আসেনি নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। নিরাপত্তার কারণে নিউজিল্যান্ড তাদের সফর বাতিল করায় বেকে বসে অস্ট্রেলিয়াও। ঐ বছরের আগস্টে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যাবার কথা ছিলো অসিদের। কিন্তু মে মাসে নিউজিল্যান্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় সফর শুরুর দু’মাস আগে পাকিস্তানে যেতে অস্বীকৃতি জানায় অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু খেলোয়াড়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, মাইকেল স্লাটারসহ আরো অনেকে।

৫. ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায় অস্ট্রেলিয়া দল। নিরাপত্তার কারণে সিরিজ ও ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা জেগেও তা আর হয়নি। ২০০৫ সালের ৭ জুলাই লিডসে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে স্টেডিয়াম থেকে ২৭০ কিলোমিটার দূরে বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তাতে ম্যাচ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের দৃঢ়তায় সেই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। এমনকি সিরিজের বাকি দু’টি ম্যাচও নিরাপত্তার চাদরে সম্পন্ন হয়।

তবে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল ঐ সফরের অ্যাশেজ সিরিজ। কারণ ২১ জুলাই লন্ডনে আবারো দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা করে। অবশ্য তাতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার পেসার জেসন গিলেস্পি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু সেটি খুব বেশি ঝামেলা সৃষ্টি করেনি। তারপর নিরাপত্তার বেষ্টনি বাড়িয়ে দেয় ইংল্যান্ডের নিরাপত্তাবাহিনী। তাতে ওয়ানডের মত ভালোভাবেই সম্পন্ন হয় অ্যাশেজ।

৬. নিরাপত্তার কারণে ২০০৮ সালেও পাকিস্তান সফর বাতিল করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। সফর শুরুর মাত্র এক মাস আগে পাকিস্তানে খেলতে আপত্তি জানায় অসিরা। তবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়া। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজ আয়োজন করে দু’দেশ।

৭. ২০০৮ সালের নভেম্বরে ভারতের মুম্বাইতে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাতে ১৬৪ জন নিহত ও প্রায় ৬শ’ মানুষ আহত হয়। তাতে সিরিজের মাঝেই দেশ ছেড়ে চলে যায় ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সাত ওয়ানডে সিরিজে প্রথম পাঁচ ম্যাচ শেষে ৫-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ভারত হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু বোমা হামলার কারণে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

৮. ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার কারণে ২০০৯ সালের প্রথম দিকে নির্ধারিত পাকিস্তান সফর বাতিল করে ভারত। ভারতের মতে এ হামলার পিছনে পাকিস্তান জড়িত ছিলো। ভারত সফর বাতিল করার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে যায় শ্রীলংকা। আর ঐ সফরেই দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন লাহোরে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছে শ্রীলংকা দল বহনকারী বাসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ঐ হামলায় পুলিশ সদস্যসহ ছয় ব্যক্তি নিহত এবং লংকান দলের ছয় খেলোয়াড় আহত হন।

সর্বশেষ নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে প্রস্তাবিত দুই টেস্টের সিরিজের জন্য বাংলাদেশ সফর স্থগিত করলো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল।

আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।