‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিকেই এমডি হিসেবে চাইবে ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩০ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২০

পর্ষদ সভায় আপত্তি ওঠার পরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক এমডি কাজী সানাউল হককে অনুমোদন দিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রস্তাব দেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

ডিএসইর এমডি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ‘নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটির (এনআরসি)’ সুপারিশের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

ডিএসইর পরিচালক ও এনআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আজকের পর্ষদ সভায় ডিএসইর এমডি হিসেবে কাজী সানাউল হকের নাম বিএসইসিতে প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে পর্ষদের একটি সূত্র জানিয়েছে, কাজী সানাউল হককে এমডি করার বিষয়ে পর্ষদের একাধিক সদস্য দ্বিমত প্রকাশ করেন। আইসিবির এমডি থাকা অবস্থায় সানাউল হকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকায় তাকে ডিএসইর এমডি করতে আপত্তি জানান তারা।

এরপরও এমডি হিসেবে বিএসইসিতে কাজী সানাউল হকের নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত হয় পর্ষদ সভায়। তবে এ ক্ষেত্রে বিএসইসিতে পাঠানো প্রস্তাবে পর্ষদ সদস্যরা যেসব অভিমত দিয়েছেন তা তুলে ধরা হবে। এর প্রেক্ষিতে এমডির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এর আগে গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত ডিএসইর এনআরসি বৈঠকে ডিএসইর নতুন এমডির জন্য ছয়জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন আইসিবির সাবেক এমডি কাজী সানাউল হক, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি শফিকুল আলম, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ডিএসইর সাবেক এমডি শরিফুল ইসলাম, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি রেজাউর রহমান, জনতা ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শরীয়ত উল্লাহ এবং গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের সাবেক সচিব ও সিএফও সারোয়ার খান।

তাদের মধ্যে ডিএসইর সাবেক এমডি শরিফুল ইসলাম এবং জনতা ব্যাংকের সিএফও শরীয়ত উল্লাহ সাক্ষাৎকার দেননি। বাকি চারজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ডিএসইর নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি কাজী সানাউল হক এবং যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি শফিকুল আলমকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারের বোর্ড সভায় কাজী সানাউল হকের নাম প্রস্তাব করা হয়।

কাজী সানাউল হকের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও ডিএসইর প্রভাবশালী একটি গ্রুপ তাকে এমডি করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত ওই গ্রুপের ইচ্ছাতেই পর্ষদ সভায় আপত্তি ওঠার পরও এমডি হিসেবে কাজী সানাউল হকের নাম বিএসইসিতে প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পর্ষদ সভায় কাজী সানাউল হককে এমডির করার আপত্তির বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, পর্ষদ সদস্যরা যেসব মতামত দিয়েছেন, তা উল্লেখ করেই ডিএসইর এমডি হিসেবে বিএসইসিতে সানাউল হকের নাম প্রস্তাব করা হবে।

এর আগে দুই দফা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে ব্যর্থ হয় ডিএসই। ওই দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকে ‘যোগ্য’ মনে করিনি ডিএসইর সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রায় ছয় মাস ধরে ডিএসইর এমডির পদ খালি রয়েছে।

ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পর ডিএসইর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৯ জুন নিয়োগ পান সাবেক ব্যাংকার কে এ এম মাজেদুর রহমান। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ জুলাই। তার পর থেকেই পদটি খালি রয়েছে।

ডিএসইতে এমডি পদে যোগ দেয়ার পর বিদেশ ভ্রমণ, কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিতর্কের জন্ম দেন মাজেদুর রহমান। এরপরও ডিএসইর পর্ষদ থেকে মাজেদুর রহমানকে এমডি পদে পুনরাই নিয়োগ চেয়ে বিএসইসিতে আবেদন করা হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসইর ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। এর প্রেক্ষিতেই নতুন এমডির খোঁজ শুরু করে ডিএসই।

এ লক্ষ্যে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেন। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি।

এরপরে গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এক্ষেত্রে আবেদন করেন তিন জন। অর্থাৎ দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল।

দুই দফায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে গত ২ অক্টোবর সাত প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে তিন জনকে নিয়ে শর্ট লিস্ট করা হয়। যাদেরকে গত ৬ অক্টোবর ডিএসইর পর্ষদ ডাকে। তবে ওই ৩ জনের মধ্যেও কাউকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য যোগ্য মনে করেনি পর্ষদ।

এ কারণে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় যোগ্য এমডির খোঁজে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ ডিসেম্বর ‘যোগ্য’ এমডির সন্ধানে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আগের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফার বিজ্ঞপ্তিতেও এমডি পদে আবেদনের জন্য যোগ্যতা হিসেবে বিজনেস, ইকোনোমিকস, স্ট্যাটিসটিকস, ম্যাথ অথবা আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। আর প্রফেশনাল ডিগ্রি সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস, সিপিএ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। তবে ক্যাপিটাল মার্কেটের ওপরে আন্তর্জাতিক দক্ষতা সম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা হয়।

এমএএস/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।