ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণ : প্রতিবাদের উত্তাপ ফেসবুকেও
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস। ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে দিনের পাশাপাশি রাতেও ক্যাম্পাসে সরব আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। নিজ ক্যাম্পাস ও সহপাঠিরা ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রতিবাদের ঝড়।
সহপাঠী ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশের পর রাতেই (রোববার দিনগত রাত) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছির বের করা হয়। তবে সকাল থেকে প্রতিবাদ এবং ধর্ষকের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। দুপুরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ডাকসু ভিপি ও অন্যান্যা শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।
সবার একটাই দাবি, ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় যারাই জড়িত থাক তাদের চিহ্নিত ও দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সাংবাদিক অঞ্জন রায় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘জন্মসূত্রে এই চলমান সমাজে আমি ‘অগ্রসর’ পুরুষকুলেরই একজন, ধর্ষণ করার ক্ষমতাটা আমাকে আমার সমাজ দিয়েছে। আমি আইন আর গ্রন্থ দিয়ে নারীকে বাঁধতে জানি, আমি অনাসে কয়েকটা নোট ছুড়ে দিয়ে নারী শরীর কিনতেও জানি।’
‘আমরা ভদ্রলোকেরা কোন নারী নির্যাতিত হলে বলি কি পাশবিক বিষয়! অথচ বন্ধুরা, পশুকুলের একটি ধর্ষণের ঘটনাও কি আমরা দেখেছি? আমরা কি দেখেছি কোন পশু খাবার ছাড়া অন্য কারণে হত্যা করে? না– আমরা দেখিনি।’
‘এমন কি নৈতিকতা শব্দটাও আমরা আমাদের মতোই প্রয়োগ করতে জানি। জানি বলেই কোন অঘটন আমাদের বোধকরি স্পর্শ করে না- করে না বলেই কিছু ভুলভাল বিশেষণ আর আমার মতোই দু একটা পোস্ট দেয়া শেষেই ঝাঁক কৈ আবার ঝাঁকে মিশে যাই। কনজুমারিজম শাসিত সমাজের ভোগবাদের ক্যাফেকফিতে বসে গরম কাপে চুমুক দিতে দিতে আরেকটা ‘ইভেন্টের’ অপেক্ষা করি। গুনতে থাকি ফেসবুকে দেয়া শেষ পোস্টের লাইকের সংখ্যা।’
সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ধর্ষকদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ এই কাজটি করে দেখাক। সরকারের কাছে তো আমরা বেশি কিছু চাই না; আমাদের বোন, কন্যাদের জন্য একটা নিরাপদ শহর চাই শুধু।’
চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হন। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু এর প্রতিকার হতে হবে। ধর্ষকদের এমন কোনো মর্মান্তিক শাস্তি দেয়া উচিৎ যা দেখে অন্যরা এই ধরনের জঘন্য কাজ করতে সাহস পাবে না। ধর্ষকদের মনে ভয় জন্মাবে।ধর্ষকদের ওপেন প্লেসে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিৎ। এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না! কোনো মা, কোনো বোন, কোনো কন্যা ধর্ষিতা হয়েছে- মানুষ হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?’
তরুণ লেখক ও নির্মাতা সাদাত হোসাইন কবিতার আকারে লিখেছেন, ‘দোষ কার?/মেয়েটার মেয়েটার!/জামাখানা খাটো তার, হাতা আঁটসাঁটো তার,/দুলিয়ে কোমরখানা, হেঁটে যাওয়া পাট-ও তার।/তাহলে?/ধর্ষণ করে শেষে, গলাখানা কাটো তার।/আচ্ছা, আচ্ছা,/আপনিতো আস্ত, শুয়োরকা বাচ্চা!/কী?/জ্বী জনাব, ঠিক ঠিক বলেছি।/এই যদি রীতি হয়, আপনার নীতি হয়,/মানুষের চেয়ে বেশি, পোশাকের প্রীতি হয়,/তবে ওকে, আচ্ছা,/আপনিতো, শুয়োরকা বাচ্চা।/মাংসের শরীরে, শরীরের মাংসে,/কতটুকু পর্দা, কতটুকু ভাংছে?/এই যদি ধর্ষণে, যুক্তির বুলি হয়,/তুই তবে পশু ঠিক, ‘নর’ বলা ভুল-ই হয়।’
এছাড়াও ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট, পেইজ এবং গ্রুপে বইছে প্রতিবাদের উত্তাপ। সকলের একটাই দাবি, ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক এবং বিচার করা হোক। ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছেন ঢাবির ভিপি নুরুল হক নুর।
এদিকে ঢাবির এ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান হক জানিেছেন, ‘মামলার এজাহারে মেয়েটিকে একজন ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
আরএস/জেআইএম