হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু : তালা ঝুলিয়ে পালালো কর্তৃপক্ষ


প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৫

চিকিৎসাধীন তিন শিশুর মৃত্যুর পর ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়াস্থ এশিয়ান কার্ডিয়াক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য শিশুদের দুপুর থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকরা।
 
বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো। হাসপাতাল ফাঁকা। কোনো মানুষ নেই।
 
সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জানান, ৩ শিশুর মৃত্যু পর অভিভাবকরা বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আসায় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
 
হাসপাতালে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (এনআইসিইউ) চিকিৎসাধীন এক শিশুর অভিভাবক জানান, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে ৩ শিশু মারা গেছে। গত চার দিনে এই হাসপাতালে ছয়জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব শোনার পর এখানে আর আমাদের শিশুকে চিকিৎসা দেয়ার সাহস পাচ্ছি না।
 
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শিশু মৃত্যুর পর অভিভাবকরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করায় তালা লাগিয়ে সব চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে পালিয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাই।
 
শনিবার দুপুরের পর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়াস্থ বি-ব্লকের ৩/৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত এশিয়ান হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। কোনো লোকজনও নেই। সাংবাদিক দেখে আশেপাশে থেকে কয়েকজন লোক এসে ভিড় করেন।
 
আলী নামে এক ড্রাইভার জানান, তিনি প্রায় তিন বছর থেকে গাড়ি চালান। সেই সুবাদে তিনি প্রায়ই দেখেন কেউ না কেউ কাঁদছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শিশু মারা গেছে। এরকম শিশু মারা যাওয়ার খবর তিনি প্রায় শুনেন এবং দেখেন।

খাদেমুল নামে অপর একজন জানান, গ্রাম থেকে আসা রোগীদের এখানে দালালের মাধ্যমে নিয়ে আসা হতো। কোনো রকম রোগীটাকে হাসপাতালে ঢুকাতে পারলেই পকেটকাটা শুরু করে দেন। জোর করে রোগীকে আটকে রেখে লাখ টাকা বিল করেন। আবার অনেক সময় বলেন, টাকা নিয়ে আসেন, রোগী আইসিইউতে আছে। উপায় না পেয়ে টাকা নিয়ে আসেন। অনেক সময় টাকা নিয়ে রোগীর স্বজনরা দেখেছেন, তাদের রোগী মারা গেছে।
 
এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৩ সালের পর থেকে হাসপাতালটির কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। যদিও হাসপাতালটি চালু হওয়ার প্রায় বছর দশেক হয়েছে।
 
এশিয়ান হাসপাতালটি মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় হলেও থানার কাছে এটির কোনো তথ্য নেই।
 
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, হাসপাতালের প্রকৃত মালিক কে তা জানা যায়নি। শুক্রবার থেকে সবাই পলাতক রয়েছে। তাই পিয়নকে হাসপাতালটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
ডিএমপির মোহাম্মদপুর বিভাগের কমিশনার বিপ্লব কুমার সাহা জানান, রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে হাসপাতালে তিনজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, তারা হাসপাতালে কাউকে খুঁজে পাননি। চেষ্টা চলছে।

জেইউ/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।