অবৈধভাবে বালু উত্তোলন : জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে


প্রকাশিত: ০৪:৪৮ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ও ভোলাব ইউনিয়নের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নামধারী নেতার নেতৃত্বে রাতভর প্রকাশ্যে ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিয়োগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদী থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৯০ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গত দুই মাস আগে দিনে-দুপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে বালু সন্ত্রাসদের উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই সময় কৃষকদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। পরে কৃষকরা বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায় পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে ড্রেজার জব্দ করে। এ সময় মজিবুর রহমান নামে এক বালু সন্ত্রাসকে আটক করা হয়। এরপর বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে দিনে-দুপুরের বদলে রাতভর আবারো ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী জানায়, ভোলাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নামধারী নেতা রিপন সরকার, সাদেক সরকার ও জাহিদ খন্দকারের নেতৃত্বে ভোলাব ও দাউদপুর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে রাতভর ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের বেশ কয়েক বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। কৃষকরা প্রতিবাদ করতে গেলে বালু উত্তোলনকারীরা গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে থাকে।

শুধু তাই নয়, তারা ড্রেজারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সব সময় প্রস্তুত থাকে। প্রতিবাদ করলেই কৃষকদের হামলা করা হয়। এ ব্যপারে কৃষকরা একাধিকবার এভাবে বালু উত্তোলনে নিষেধ করেন। যারা নিষেধ করেছেন তাদের উপর  হামলা চালানো হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কাজল মিয়াম বাদল মাস্টার, কবির হোসেন, রমজান মিয়া, কাশেম আলী, বিল্লাল হোসেন, জাফর আলী, মোফাজ্জল হোসেন, আল-মাসুদ, রিপন মিয়াসহ আরো অনেকেই অভিযোগ করে জানান, প্রতি রাতে ড্রেজারের মাধ্যমে প্রায় ২০টি বালুবাহী বলগেট সাপ্লাই দেয়া হয়। এতে প্রতি বলগেট ১৫ হাজার টাকার বালু বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন ৩ লাখ ও প্রতি মাসে ৯০ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে নদী পাড়ের ফসলি জমি ও বসতভিটা ভেঙে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, কালা নজরুল, আমান উল্লাহ, দুলাল, মাদক ব্যবসায়ী হিরনসহ তাদের বাহিনীর সদস্যরা নৌকাযোগে রাতের আধারে নদীর পাড়ের ফসলি জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর এসব মাটি স্থানীয় বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।  

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই বালু সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্যে করতে রাজি হননি।

দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টার জাগো নিউজকে বলেন, ভোলাব এলাকার কয়েকজন বালু সন্ত্রাস অন্যায়ভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা প্রতিহত করতে গেলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। বালু সন্ত্রাসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রাতে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই বা কেউ অভিযোগও করেনি। যেহেতু জেনেছি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর বালু সন্ত্রাসদের কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন করাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। বালু সন্ত্রাসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মীর আব্দুল আলীম/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।