গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য অব্যাহত
নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাসের হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা-নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে। বেশির ভাগ পরিবহনে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। কোথাও কোথাও বাসের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। নগরের কোন পরিবহনে নতুন ভাড়ার তালিকা না টাঙানোর চিত্রও দেখা গেছে।
পরিবহন মালিকরা বলেছেন, এখনও তারা নতুন ভাড়ার তালিকা হাতে পাননি। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এরকম চিত্রই দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণের পর থেকেই দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন চালক-হেলপার ও সাধারণ যাত্রীরা।
মিরপুর থেকে নিয়মিত গুলিস্তানের যাত্রী মো. ইউসুফ এই প্রতিবেদককে জানান, কয়েকটি বাস মিরপুর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছিল ২২টাকা । তবে নতুন ভাড়া অনুযায়ী তা ২৪ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও ২৫টাকা নির্ধারণ করেছে বাস কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরো জানান, সিটিং গাড়িতে মিরপুর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২৫টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারওয়ান বাজার বা শাহবাগে যারা নেমে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকেও পুরো টাকা রেখে দেয়া হচ্ছে। তাই হেলপারদের সঙ্গে যাত্রীদের অনেক বাকবিতণ্ডা হয়। মাঝে মাঝে তা হাতাহাতির পর্যায়েও চলে আসে।
এদিকে সদরঘাট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলাচলকারী ভিক্টর পরিবহনের বিরুদ্ধেও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় সব পরিবহনের বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগ চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, নতুন ভাড়ার হার ও বিআরটিএর দূরত্ব-সংক্রান্ত নতুন ভাড়ার হার অনুসারে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্কর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত যাত্রী প্রতি ভাড়া বাড়বে এক টাকা। একইভাবে উত্তরা হাউস বিল্ডিং থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত একজন যাত্রীর দুই টাকা ভাড়া বাড়বে।
একাধিক পরিবহনের মালিক বলেন, নতুন ভাড়ার তালিকা প্রতিটি কোম্পানি নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করবে নাকি পৌঁছে দেয়া হবে, তা তারা জানেন না। এই বিষয়ে বিআরটিএ কোনো নির্দেশনাও দেয়নি বলেও জানান তিনি।
এক যাত্রী অভিযোগ করেন, মহাখালী থেকে ফার্মগেটে আসতে ন্যূনতম ভাড়া ৫ টাকা নেয়ার কথা, সেখানে তার কাছ থেকে ৭ টাকা নেয়া হয়েছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, বনানী থেকে ফার্মগেট আসতে ৭ টাকার জায়গায় ১০ টাকা নেয়া হয়েছে।
বিহঙ্গ পরিবহনের হেলপার বলেন, মিরপুর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত দূরত্বে দুই টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আগের ১৩ টাকার বদলে তারা নিয়েছেন ১৪ টাকা করে।
মিরপুরগামী, উত্তরা আবদুল্লাহপুর ও মোহাম্মদপুরগামী কয়েকটি বাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসগুলোয় ভাড়ার কোন তালিকা নেই। গন্তব্য অনুসারে কোন কোন বাসে দ্বিগুণ হারে ভাড়া বেশি নিয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
বঙ্গবাজার থেকে আবদুল্লাহপুরগামী ৩ নম্বর বাসে আগে কারওয়ান বাজারের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। শুক্রবার দুপুরে ১০ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রী মিজানুর রহমান পলাশ। এই নিয়ে বাসের মধ্যে যাত্রীদের হাতাহাতির ঘটনাও হয়েছে।
সর্বোপরি নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর রাজধানীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাসের এখনো তালিকা না টাঙ্গানোর কারণে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার মহা উৎসবতো রয়েছেই। এই সংকট দ্রুত সমাধান হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন নগরবাসী।
এমএম/জেডএইচ