গাভীর দুধ বাছুরের সঙ্গে পান করে ছাগলের বাচ্চাও
বাঘে মহিষে একসাথে জল না খেলেও নড়াইলের আরতী বিশ্বাসের গাভীর দুধ একসাথে পান করে গাভীর নিজের জন্ম দেওয়া বাচ্চা বাছুর মুন্নি ও আরতীর পালিত ছাগলের বাচ্চা ভোম্বল। ঘটনাটি ঘটছে নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের বাঁশভিটা গ্রামে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এঘটনা দেখতে প্রতিদিন সকালে শত শত মানুষ উপস্থিত হচ্ছে নড়াইল যশোর সড়ক সংলগ্ন আরতী বিশ্বাসের বসত বাড়িতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আরতী বিশ্বাস চার বছর আগে নড়াইল যশোর সড়কের পাশে বিলের কিনারায় (সরকারি জমির উপর) একটি ঢেউটিনের ঘর ও একটি গাভী একচল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। আরতী গাভীটির নাম দেন লক্ষ্মী।
আরতী বিল থেকে কলমি, শাপলা ও বিভিন্ন স্থান থেকে কচু, থানকুনি ও পেপলির পাতা সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করে চার সদস্য বিশিষ্ট সংসারের খরচ যোগান। তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও ওই সবজি বিক্রির উপার্জন খেকে আসে। এ ছাড়াও উপার্জন থেকে অল্প অল্প করে কিছু টাকা যোগাড় করে আরতী একটি মেয়ে ছাগল ক্রয় করে নাম দেন টেপি।
অনেক কষ্টে লালন পালনের পর গত চার মাস আগে লক্ষ্মী একটি মেয়ে বাছুরের এবং তিন মাস আগে টেপি দুইটি ছাগলের বাচ্চার জন্ম দেয়। আরতী গাভীর বাচ্চা বাছুরের নাম দেন মুন্নি। ছাগলের মেয়ে বাচ্চার নাম মুনিয়া আর ছেলে বাচ্চার নাম ভোম্বল রাখেন।
গত এক মাস আগে নড়াইল যশোর সড়কে চলার সময় একটি বাস মুনিয়াকে চাপা দিলে মুনিয়া মারা যায়। এ শোক আরতী কাটিয়ে নিতে পারলেও শোক সহ্য করতে পারেনি মা ছাগী টেপি। সব সময় একা একা থাকে কিছু খায়না সে। আর এই কষ্টে দুধ খেতে দেয়না বেঁচে যাওয়া টেপির অপর ছেলে বাচ্চা ভোম্বলকে।
তখন ভোম্বল আরতীর গাভী লক্ষীর দুধ খাওয়া শুরু করে। দুধ খেতে বাধা দেয়না গাভী ও গাভীর বাচ্চা মুন্নিও। তাই সকাল হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকে ভোম্বল। কারণ সকালে যখন মুন্নি লক্ষ্মীর দুধ খাওয়া শুরু করে তখন দৌড়ে যেয়ে ভোম্বলও একই সাথে লক্ষ্মী দুধ খায়।
একা একা গেলে লক্ষ্মী ভোম্বলকে দুধ খেতে দেয়না। তাই সকালে মুন্নি ও ভোম্বল একসাথে লক্ষ্মীর দুইবান চেটে দুধ খায়। এ দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে বলেই শত শত লোক ভিড় করছে আরতীর বাড়িতে। আর বলছে মানুষের এ দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আরতীর সংগ্রাম
আরতীর বড় ছেলে উজ্জ্বল (১৪) নয়নপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে দ্বিতীয় মেয়ে চুমকি (৯) চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে পিংকি (৭) দ্বিতীয় শ্রেণিতে সিতারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
আরতীর বাবা কালিপদ বিশ্বাস ১৬ বছর আগে মাদারীপুর জেলার চৌরাশি গ্রামের বলাই ভক্তের সাথে বিয়ে দিলে ভালোভাবে সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করছিল। তবে এ সুখ আরতীর কপালে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ছোট মেয়ে পিংকি পেটে আসলে আরতীর স্বামী বলাই ভক্ত আরেকটি বিয়ে করে আরতী উপর নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আরতী বাবার বাড়ি নড়াইল পৌরসভার দুর্গাপুর গ্রামে চলে যান।
বাবা কালিপদর অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেও বেশিদিন থাকতে পারেনিন।
এক বছর পরে বাবার বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে ভাড়া থেকে বিভিন্ন হোটেল ও বিভিন্ন বাসায় কাজ করতেন। এত কিছুর পরও সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরতী বিশ্বাস জানান, আমার অনেক কষ্ট। ছেলে মেয়ে গরু ছাগল নিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আমি আমার ছেলে মেয়ে উজ্জ্বল, চুমকি ও পিংকিকে যেমন ভালোবাসি আদর করি তেমনই গাই লক্ষ্মী, লক্ষ্মীর বাছুর মুন্নি, ছাগল টেপি, টেপির বাচ্চা মুনিয়া ও ভোম্বলকেও ভালোবাসি আদর করি।
আমার এই গরু ছাগল পোষা (পালন করা) এহেনের (এখানকার) লোক ভাল চোখে দেখেনা । খারাপ জানে, বেশি বলে।
আরো বলেন- লেখাপড়া না করে আমি ভুল করেছি চাকরি করতে পারিনা টু পর্যন্ত পড়েছি। সেই ভুল আর করবোনা ছেলেমেয়েদের পড়াবো মানুষ করবো। সরকার যদি আমাকে লোন দিত তাহলে আমি আরো ভালো ব্যাবসা করতে পারতাম ছেলেমেয়েদের ভালোভাবে পড়াতে পারতাম।
হাফিজুল নিলু/এসএইচএস