বিদেশগামীরা ট্রেনিং নিয়েছে কি না, নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ
বিদেশগামীদের সঠিক ট্রেনিং দেয়া হয়েছে কি না, এ জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বিদেশগামী লোকদের জন্য ট্রেনিং ও ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে লোক পাঠানো হলে তাদের আলাদা গুরুত্ব থাকে। নারীরা উপযুক্ত ট্রেনিং নিয়ে না গেলে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ওই নির্দেশ দিয়ে এসব কথা বলেন। বক্তব্য শেষে প্রবাসী মেলার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ হলে দেশে-বিদেশে দুই জায়গাতেই কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা সারাদেশে ১০০টি শিল্পাঞ্চল করছি। এ সমস্ত শিল্পাঞ্চলেও দক্ষ জনগণের প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। তাদের এই অর্থ যেন দেশের কাজে লাগে, সেজন্য আমরা তাদের পাঠানো অর্থের দিকে আলাদা দৃষ্টি দেই। অনেকে দক্ষতা অর্জন না করে বিদেশে যায়। তারা খুব নিম্ন চাকরি করে এবং কষ্ট করে অর্থ পাঠায়। এ জন্য তাদের পাঠানো অর্থের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসীরা যাতে সঠিক পথে অর্থ প্রেরণ করে, আমরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। তারা সঠিক চ্যানেলে অর্থাৎ কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাথ্যমে টাকা পাঠালে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়। এ জন্য এবারের বাজেটে আমরা ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি।
তিনি বলেন, শ্রমবাজার আরও যাতে সম্প্রসারিত হয়, সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি আলাদা সেল গঠন করেছে। কোন দেশে লোকের প্রয়োজন এবং সেখানে আমাদের কর্মীরা কীভাবে যাবে, কী কাজ করবে, এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছে। বিদেশগামী কর্মীরা যাতে কোনোরকম ধোঁকার মুখে না পড়ে, সে বিষয়টিও এই সেল দেখবে।
‘দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য আমরা ট্রেনিংয়ের ওপরেও খুব গুরুত্ব দিয়েছি। তারা যেন উপযুক্ত ট্রেনিং পায় এবং যে দেশে যাবে, সে দেশের ভাষা সম্পর্কে তাদের যেন জ্ঞান থাকে। এ বিষয়ে ৯টা ভাষা দিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই অ্যাপ থেকে তারা ভাষা শিখতে পারবে। দেশের ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫৫টি ট্রেডে তাদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। ইংরেজি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি ভাষা যাতে তারা শিখতে পারে অর্থাৎ যে যে দেশে যাবে সে দেশের ভাষা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে, সে বিষয়ে আলাদাভাবে তাদের ট্রেনিং করানো হচ্ছে।’
‘সৌদি আরব এবং হংকংয়ের উদ্যোগে যৌথভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারী কর্মীরা যেখানে যায়, তাদের জন্য একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাপান সৌদি ও হংকং যেখানেই যাবে, তাদের যেন ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে পাঠানো হয়। ট্রেনিং এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে’, -যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীরা উপযুক্ত ট্রেনিং নিয়ে না গেলে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। সারা বাংলাদেশে ৫,২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ হাজার পোস্ট অফিস রয়েছে, সেখানেও ডিজিটাল সেন্টার হয়ে গেছে। এই ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে বিদেশগামীরা আবেদন করতে পারে এবং নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সেখান থেকে বেছে বেছে লোক নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে তাদের বিদেশে পাঠাতে পারবে।
রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য অদক্ষ কর্মীদের বিদেশে পাঠাবেন না। বিদেশে পাঠানোর নামে অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে যায়। দালালরা গ্রামের মানুষকে বিদেশে পাঠিয়ে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায়। অনেকে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বা বিক্রি করে বিদেশে চলে যায়। এখন বিদেশ যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রয়েছে, কোথায় চাকরি করবে তাও নির্দিষ্ট করা আছে এবং বেতন কেমন তাও যাচাই-বাছাই করার সুযোগ রয়েছে। তার পরেও কিছু কিছু লোক ধোঁকায় পড়ে যায়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আছেন, তাদের বলব, এ ধরনের ধোঁকায় যেন কেউ না পড়েন। ধোঁকায় পড়ে কেউ কারো ছেলেমেয়েকে পাঠিয়ে না দেয়।
তিনি বলেন, অনেকে বিয়ে করা স্ত্রীকেও পাঠিয়ে দেয় এবং বিক্রি করে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মেয়েদের জন্য সিমের ব্যবস্থা করেছি, মোবাইলের ব্যবস্থা করেছি এবং স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থা করেছি। তারা যেখানে যাবে সেখান থেকে যেন কথা বলতে পারে। আমরা যে স্মার্ট কার্ড করে দিচ্ছি, এই স্মার্ট কার্ডের দ্বারা বিমানবন্দরে কর্মীদের হয়রানি বন্ধ হবে। বিমানবন্দরে কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তা থাকে, তাদের প্রবণতাই থাকে যে বিদেশ থেকে আসলে তাদের কাছ থেকে কিছু হাতিয়ে নেয়া। এর জন্য আলাদা ডেস্ক, ক্যামেরা এবং গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা লোকজনদের হয়রানি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিমানবন্দরে তারা যেন কোনোরকম হয়রানিতে না পড়ে।
‘ইতোমধ্যে আমরা ই-পাসপোর্টের ব্যবস্থা করেছি। ই-পাসপোর্ট আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা দেয়া শুরু করব। এই পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ১০ বছর। বারবার টাকা খরচ করে আর পাসপোর্ট তৈরি করা লাগবে না, সে কারণেই এ ব্যবস্থা।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা।
এফএইচএস/জেডএ/এমকেএইচ