১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা


প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ০১ অক্টোবর ২০১৫

গ্যাসচালিত গণপরিবহনের কিলোমিটারে ১০ পয়সা ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু মালিক পক্ষ নিচ্ছে অনেক বেশি। এমনকি ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকাও আদায় করা হচ্ছে।
 
রাজধানীর গাবতলী ও মিরপুর থেকে মহাখালী ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত বাড়তি ভাড়ার বদলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
 
বিশেষ করে লেগুনা চালকদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। লেগুনা চালক ও হেলপাররা ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দাবি করায় যাত্রীদের সঙ্গে তুমুল বাক-বিতণ্ডাও হতে দেখা গেছে।
 
চলতি বছরের ২৭ আগস্ট বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার। গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়, যা গত মাস থেকে যা কার্যকর হয়েছে।
 
এই সিদ্ধান্তের একমাস পর ১ অক্টোবর থেকে বাস ভাড়ার নতুন এই কাঠামো যাত্রী পর্যায়ে কার্যকর করা হয়। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল এর প্রভাব গ্যাস চালিত সাধারণ যাত্রীদের উপর খুব একটা পড়বে না।
 
ভাড়ার নতুন কাঠানো অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীসহ আশপাশের পাঁচ জেলা এবং চট্টগ্রামে বাস-মিনিবাসের নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে।
 
নতুন এই কাঠামোতে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া বেড়েছে মাত্র ১০ পয়সা, সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই ৭ টাকা এবং মিনিবাসের ৫ টাকা বহাল রয়েছে। তবে প্রায় সব বাস ও লেগুনা মালিক পক্ষ এই আদেশ অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
 
শামসুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জানান, প্রতিদিন তিনি গাবতলী থেকে মহাখালী লেগুনায় চলাচল করেন। এজন্য তাঁকে ভাড়া দিতে হতো ১৫ টাকা কিন্তু। কিন্তু এখন চাওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে মাত্র ১০ পয়সা। গাবতলী থেকে মহাখালীর দূরত্ব সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। সে অনুযায়ী ভাড়া বাড়লে মাত্র ১ টাকা বাড়বে। কিন্তু তা না করে বেশি চাওয়া হচ্ছে।
 
মিরপুরের যাত্রী আফসার উদ্দিন মহাখালীর আমতলীতে একটি বেরসকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। তিনি জানান, আমার ভাড়াও ১৫ টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া না দেয়ায় এখন লেগুনা থেকে নামিয়ে দিতে চাইছে ওরা।
 
সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকার যাত্রীরা। এই এলাকার যাত্রীদের সঙ্গেই বেশি ঝামেলা হচ্ছে লেগুনা চালক ও হেলপারদের।
 
শ্যামলী ও কল্যাণপুর থেকে মহাখালীর ভাড়া ছিল ১০ টাকা। কিন্তু এখন ২০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রী সাধারণের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন বেশি ভাড়া দেবো না। আবার কেউ বা নীরবে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছেন।
 
লেগুনা চালক আলমগীর জানান, সরকার যা নির্ধারণ করে দিয়েছে তাই নেয়া হচ্ছে। বেশি নেবো কেন? কল্যাণপুর থেকে মহাখালীর দূরত্ব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। তাহলে ১০ পয়সা ভাড়া বাড়লে কতো বাড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিক বলেছে, ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা আদায় করতে। আমরা কি করতে পারি বলেন।’
 
সিরাজুল ইসলাম নামে এক ফেরি ব্যবসায়ী উঠেই লেগুনার হেলপারকে বলেন, ভাড়া বেশি চাইবি তো মাইর খাইবি।
 
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘৮ সিটের লেগুনা বানিয়েছে ওরা ১২ সিট। এর বাইরে চালকের পাশে আরো ২ সিট। পেছনেও যাত্রীদের ঝুলিয়ে নিয়ে যায়। সব কিছু ওরা মগের মুল্লুক ভাবছে। এক টাকাও বেশি দিমু না।’
 
তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীপ্রতি ভাড়ায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
 
শেরে বাংলানগর এলাকায় যাতায়াতকারী বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তা মুজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকার প্রতিবার ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে বলে এর প্রভাব যাত্রীদের উপর পড়বে না। কিন্তু বেশি তো নেয়া হচ্ছে। ভাড়া বেশি চাইলে কি আমার মতো লোক এই লেগুনার হেলপারের সঙ্গে মারামারি করবো?
 
তিনি বলেন, সরকার কেন এসব নজরদারি করছে না? এভাবে আমাদের জিম্মিদশা আর কতো দিন? এর একটা বিহিত হওয়া দরকার বলেও দাবি করেন তিনি।
 
জেইউ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।