কোন পথে হাঁটছে সিরিয়া!


প্রকাশিত: ০৮:৫২ এএম, ০১ অক্টোবর ২০১৫

আফগানিস্তান, ইরাক, তিউনিশিয়া, লিবিয়ার পর সিরিয়া। কোথাও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কোথাও গণতন্ত্র, কোথাও বাক-স্বাধীনতা, আর কোথাও বা আরব বসন্তের ধুয়া তুলে এককালের পরাক্রমশালী দেশগুলোকে একের পর এক ধংসস্তুপে পরিণত করছে বৈশ্বিক মোড়লরা।

বহুভাষাভাষি, ধর্ম আর গোত্রের দেশ সিরিয়ায় আজ শুধুই মানবতার আর্তনাদ। আরব, গ্রিক, আর্মেনিয়ান, আসেরিয়ান, কুর্দি, তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা যেখানে এককালে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধা ছিল, আজ সেখানে শুধুই রক্তের হোলিখেলা। আর পশ্চিমা মোড়লরা যেন এদেশটিকে ব্যবহার করছে তাদের সর্বাধুনিক অস্ত্রের পরীক্ষাগার হিসেবে, যেখানে গিনিপিগের ভূমিকায় আছে নিরীহ সিরীয়রা। আজ যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালাচ্ছেতো, কাল ব্রিটেন। একদিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস নিধনের নামে বিমান হামলা চালাচ্ছে, অন্যদিকে কট্টরপন্থী বিভিন্ন সংগঠনকে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ  দিয়ে যাচ্ছে তারা। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুসারে এসব অস্ত্রের সিংহভাগ ইতিমধ্যে আইএস’র কাছেই চলে গেছে। এ যেন অনেকটা চোরকে বলা চুরি করো, গৃহস্থকে বলা জেগে থাকো।

শিয়া বংশোদ্ভুত সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে শুরু থেকেই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ইরান এবং পার্শ্ববর্তী দেশ লেবাননের মিলিশিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ। ২০১২-১৩’তে সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই নিজস্ব অস্ত্র এবং জনবল নিয়ে বন্ধু আসাদের পক্ষে আছে হাসান নাসরুল্লাহ’র বাহিনী। মাঝে মাঝেই আইএস এবং আল নুসরা ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর দখল করা এলাকা পুনরুদ্ধারে এদের প্রধান ভূমিকা পালন করতে শোনা যায়।
আর এদিকে এতদিন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চে আসাদের পক্ষে লবিং করলেও, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এইবার সরাসরি ত্রাতার ভূমিকায়।

সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই সিরিয়ায় অস্ত্র এবং সেনা পাঠাতে শুরু করে পুটিন। এরইমধ্যে পশ্চিমা স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি অনুসারে সিরীয় বন্দর-নগরী লাটাকিয়ায় অত্যাধুনিক এসইউ মাল্টিরোল ফাইটার জেট, এসইউ-২৫ ফাইটার জেট, এমআই-২৪ এটাক হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে আর্টিলারি ব্যাটারি স্থাপন করেছে রাশিয়া।

এরিমধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত আইএস’র বিভিন্ন স্থাপনায় প্রথমবারের মত বিমান হামলাও চালায় রাশিয়া। আইএস নিয়ন্ত্রিত শহর হোমস ও এর আশপাশে বোমা হামলায় আইএস’র বেশকিছু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ার খবরও এসেছে। রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসেব মতে এইদিন অন্তত ২০টি লক্ষ্যে বিমান হামলা চালায় তারা। তবে ধ্বংসস্তুপের ওপর থেকে ধোঁয়া সরার আগেই গেল গেল রব তুলেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এশ কার্টার এরিমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই বিমান হামলা নাকি সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধকে আরো উসকে দিবে।

নিজেদের দেয়া হিসেব অনুসারেই ইতিমধ্যে সিরিয়ায় প্রায় ৩ হাজার বিমান হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা এখন নাকি রাশিয়ান বিমান হামলায় সিরীয় প্রাণহানির ভয়ে ভিত! যেখানে তাদের বিমান হামলা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতাল, স্কুল থেকে কোনো কিছুই।

জাতিসংঘের হিসেবমতে সিরীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হয়েছে বাস্তুচ্যুত।

আর বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, এই রক্তপাত শিগগিরই থামবে, এমন আশা বোধহয় করবেনা চরম আশাবাদী লোকটিও। শুধু এখন দেখার অপেক্ষা, আর কত মানুষের রক্তে পিপাসা মিটবে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীদের।

লেখক : সাংবাদিক

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।