এশিয়াটিক অয়েলে ব্যাপক অনিয়ম: অনুসন্ধান করবে দুদক
>> এসএওসিএলের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় আর্থিক অনিয়মের সূত্রপাত
>> এসএওসিএলের ব্যবস্থাপনায় বিপিসির নিবিড় অংশগ্রহণের সুপারিশ
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির (এসএওসিএল) গত ছয় বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অনিয়ম ঘটেছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, বিধি-বহির্ভূতভাবে চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অগ্রিম সমন্বয়সহ যেসব অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে, তা উপযুক্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিপিসির লিয়াজোঁ অফিসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমানের সভাপতিত্বে ৯২৩তম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বোর্ড সভার কার্যবিবরণী অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয় যে, বোর্ড সভায় বিপিসির সচিব কাজী মোহাম্মদ হাসান করপোরেশনের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির (এসএওসিএল) ২০১২-২০১৩ থেকে ২০১৭-২০১৮ পর্যন্ত মোট ছয় অর্থবছরের আয়-ব্যয়, অডিট, বিনিয়োগ ইত্যাদিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এ বিষয়ে কাজী মোহাম্মদ হাসান জানান, গত ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিপিসির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান এসএওসিএলের ২০১২-২০১৩ থেকে ২০১৭-২০১৮ পর্যন্ত মোট ছয় অর্থবছরের আয়-ব্যয়, অডিট, বিনিয়োগ ইত্যাদিসহ সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার জন্য বিপিসির পরিচালককে (অপা. ও পরি.) আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করে এবং গত ২৫ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কাজের ব্যাপকতা, সময় স্বল্পতা, কমিটির সদস্যদের নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের ব্যস্ততা এবং এসএওসিএল কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতার অভাব ইত্যাদি কারণে কমিটি ছয় অর্থবছরের মধ্যে দুইটি অর্থবছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করতে সমর্থ হয়। তারা ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে এসএওসিএলের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং আর্থিক অনিয়মের সত্যতা তুলে ধরা হয়।
বিপিসির সচিব কাজী মোহাম্মদ হাসান এ তথ্য তুলে ধরার পর বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, আর্থিক বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, বিধি-বহির্ভূতভাবে চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অগ্রিম সমন্বয়সহ যেসব অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে তা উপযুক্ত সংস্থার (দুদক) মাধ্যমে অনুসন্ধান ও তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনের অনুলিপি প্রেরণপূর্বক মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করতে হবে।
এছাড়া এসএওসিএলের বোর্ড অব ডিরেক্টরকে প্রতিষ্ঠিত চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফার্ম নিয়োগসহ দক্ষ হিসাব ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে হবে। একইসঙ্গে বিপিসির নিরীক্ষা বিভাগকে এসএওসিএলের ব্যবস্থাপনায় বিপিসির আরও নিবিড় অংশগ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। ষান্মাসিক ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও উক্ত প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক অডিট (যদি সম্পন্ন না হয়ে থাকে) সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এসএওসিএলের গত ছয় বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ ও মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। হটলাইনে পাওয়া অভিযোগটি যাচাই করে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, এশিয়াটিক অয়েলের ওই দুই কর্মকর্তা কোম্পানির নামে খোলা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিজেদের মালিকানাধীন পিরামিড এক্সিম লিমিটেড ও গুডউইন নামক কোম্পানির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা করেন।
এমইউএইচ/এইচএ/এমএস