হঠাৎ করেই বিক্ষোভে উত্তাল ঢামেক
হঠাৎ করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) প্রাঙ্গণ। ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃপরীক্ষার দাবিতে এবং আজ থেকে শুরু হওয়া ভর্তি কার্যক্রম বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার ঢামেক প্রশাসনিক ভবনের অধ্যক্ষের কক্ষের অদূরে আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বঞ্চিত পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
উই ওয়ান্ট-উই ওয়ান্ট, রি-এক্সাম-রি-এক্সাম, প্রশ্ন যদি হবেই ফাঁস, পড়বো কেন বারো মাস ইত্যাদি নানা মুর্হুমুহু শ্লোগানে গোটা ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে উঠে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা করিডোরে শুয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। শিক্ষার্থীরা প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকলেও এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের টেনে হিঁচড়ে কলেজের বাইরে বের করে দেয়। এ সময় অভিভাবক ও তাদের সন্তানদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাত্রীদের অভিযোগ পুলিশের পুরুষ সদস্যরা তাদের কয়েকজনকে কিলঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। পুলিশের দাবি তারা নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের প্রশাসনিক ভবনের করিডোর থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কোন প্রকার আঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও পুলিশের সঙ্গে বচসা চলাকালে সিনথিয়া নামের এক শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এত পুলিশ নিযুক্ত না করে যারা ১৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের পিছনে নিয়োগ দিন। প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলে আজ আমাদের আন্দোলনে নামতে হতো না, আমরাও আজ এখানে ভর্তির জন্য আসতে পারতাম।
এক শিক্ষার্থীর মা কান্নাজড়িত কন্ঠে পুলিশের এক মহিলা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার ছেলে নটরডেম কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে পাস করেছে। ঢাকা বোর্ডে ভাল ফল করায় সরকারিভাবে তাকে বৃত্তিবাবদ প্রতিমাসে টাকা দেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু পরীক্ষা হলে অবশ্যই আমার ছেলের সুযোগ হতো। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এত তীব্র গরমেও সন্তানের যৌক্তিক আন্দোলনে সাড়া দিতে তিনি নিজে অভিভাবক হয়েও রাস্তায় নেমেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ ছিল ঢামেকসহ সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রথম দিন। সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে কলেজ পরিদর্শনকালে দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষের বাইরে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তি হতে থাকে। ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল হোসেন জানান, যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কসশীটের মূলকপি পরীক্ষা করে দেখছে। একই দিন তাদের মেডিকেল টেস্টও করা হবে বলে তিনি জানান।
আন্দোলনকারীরা আগের দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা সরকারি কলেজের ভর্তি কার্যক্রম প্রতিহত করবেন। তারা সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মিছিল শ্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ সদস্যরা জলকামান নিয়ে সেখানে পাহাড়া বসায়। শহীদ নামে পুলিশের এক কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের এসে জানায়, তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করতে পারে। কিন্তু ঢামেকের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে ফল ভাল হবে না। এ সময় শিক্ষার্থীরা কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে।
হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে বহির্বিভাগের গেট দিয়ে দৌড়ে ঢামেক হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের পিছু দৌড়াতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ঢামেক কলেজে ঢুকে অধ্যক্ষের কক্ষের বাইরে অবস্থান নিয়ে মিছিল শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় নারী পুলিশ সদস্যরা নারী শিক্ষার্থীদের টেনে হেঁচড়ে বাইরে বের করার চেষ্টা করতে থাকে। ক্যাম্পাসে অবস্থানকালে পুলিশ সদস্যদেরকে তুলনামূলকভাবে নমনীয়তা প্রদর্শন করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ঢামেকে সুযোগপ্রাপ্ত এক শিক্ষার্থীর মায়ের সঙ্গে অপর এক শিক্ষার্থীর মায়ের তুমুল বাদানুবাদ হয়।
# মেডিকেলে পুনঃভর্তি পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ (দেখুন ছবিতে)
# ঢামেক অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান
# আজ থেকে মেডিকেলে ভর্তি শুরু
# পুনঃভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের আন্দোলনে সাড়া নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের
# মেডিকেলে পুনঃভর্তি পরীক্ষা : দাবি না মানলে ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচি
এমইউ/এআরএস/আরআইপি