বিদেশিদের নিরাপত্তা


প্রকাশিত: ০৬:১৮ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

রাজধানীর গুলশানে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক ইতালিয়ান নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি নিছক আইন-শৃঙ্খলা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মত কোনো বিষয়। বিশেষ করে একটি জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই হত্যার দায় স্বীকারের বিষয়টিও পরিস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলছে। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। কাজেই যে কোনো মূল্যে হত্যাকারীদের ধরতে হবে। বিদেশিরা তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ জাগিয়ে তোলাটাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।  

সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশানে কূটনীতিক পাড়ায় সিসারে তাভেল্লা নামে একজন ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি সংস্থার প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় জগিং এ বের হলে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে হত্যার যে বর্ণনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, দুজন দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে ইতালিয়ান ঐ নাগরিককে গুলি করে। পরে মোটরসাইকেলে এসে অন্য একজন তাদের দুজনকে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

যেখানে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে সেটি কূটনীতিক জোন হিসেবে পরিচিতি। এমনিতেই সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর। এরপরও সংরক্ষিত এলাকায় কী করে এ ধরনের একটি দুঃসাহসিক এবং ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারলো সেটি অবশ্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর দায় এড়াতে পারে না। এ ঘটনায় বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি  নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিষয়েও।

নিরাপত্তাজনিত কারণে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে এমনিতেই টানাপোড়েন চলছে। এরমধ্যেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বিদেশিদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিকে যুক্তিগ্রাহ্য করে তুলছে।

বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গিরা আঘাত হানতে পারে- এ রকম একটি আশঙ্কা করছিল সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এরমধ্যেই ইতালিয়ান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।

এদিকে ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’এই দাবি করেছে। ওয়েবসাইটটি তাদের অফিসিয়াল পেইজে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছে। এই দাবির যৌক্তিকতা কিংবা সত্যাসত্য নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যার বিষয়টি যে নিছক খুন, ছিনতাই বা আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপার নয় সেটি মোটামুটি পরিষ্কার। খুনিরা আগে থেকেই থাকে অনুসরণ করছিল। এবং গুলি চালিয়েছে খুব কাছ থেকে। নিহতের কোনো জিনিসপত্রও খোয়া যায়নি। দুর্বৃত্তরা গুলি করেই পালিয়ে গেছে। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে এই হত্যার আসল মোটিভ বের করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। এছাড়া আইএস-এর দায় স্বীকারের বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সবগুলো বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করতে হবে। এই ধরনের চাঞ্চল্যকর হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। হত্যার বিষয়টিকে বাণী-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তো বটেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তির স্বার্থেও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। পুলিশ এক্ষেত্রে সক্ষমতার পরিচয় দিবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।