‘দূষণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে চলে যাবে বাংলাদেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০৯ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৯

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় থাকলেও ক্রমশ বাংলাদেশ দূষণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প-গুচ্ছ স্থাপনের পরিকল্পনা : ঝুঁকিতে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, যে সম্পদগুলো রক্ষা করার জন্য সাধারণ নাগরিক থেকে সরকারের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার কথা, সেই সম্পদ ধ্বংস করার জন্য আমাদের সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। আজকে আমরা দেখেছি, কক্সবাজারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কয়লাবিদ্যুৎ স্থাপনের প্রকল্পের ক্ষতির সম্ভাবনাগুলো কতটা বাস্তব এবং অবশ্যম্ভাবী।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে, সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। সংবিধানের মাধ্যমে এ দেশের সমস্ত সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব তারা নেবে। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের নৈতিক এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে সম্পদ রক্ষার।

কক্সবাজার রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময় আমরা কক্সবাজারকে বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতির জন্য ক্যাম্পেইন করেছি। এখন আমরাই আবার কক্সবাজারকে ধ্বংস করছি। কক্সবাজার যদি না বাঁচে তাহলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব, আমাদের আর্থসামাজিক বিপর্যয় ঘটবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, দেশের সম্পদ রক্ষা করতে না পারার জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। আমি একজন সচেতন নাগরিক বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিবেশ দূষণকারী দেশের শীর্ষে দেখতে চাই না।

সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাপার নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন, যুগ্ম সম্পাদক শারমিন মুরশিদ, বাপার কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, বাবা মহেশখালী শাখার সদস্য সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের শিল্প স্থাপনায় সর্বপ্রথম পরিবেশগত সমীক্ষার প্রয়োজন। মাতারবাড়ি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে জাইকা এবং পরিবেশগত সমীক্ষাও করেছে জাইকাই। সে-ক্ষেত্রে তারা নেতিবাচক দিকটি জানলেও সেটা প্রকাশ করবে না। কোনো প্রকল্পেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশগত কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। এর প্রভাব মানুষের প্রকৃতির ওপরে কী হবে তাও করা হয়নি। বিদ্যুৎ আমাদের প্রয়োজন আছে, তবে তা দেশের ও পরিবেশের ক্ষতি করে নয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কক্সবাজারের মাত্র ২৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৭ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সারাদেশে যতগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে তার অর্ধেকই কক্সবাজার অঞ্চলে।

কক্সবাজারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থানগুলো হবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বন-জঙ্গল, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং সংরক্ষিত এলাকা। ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১৩টি স্থাপন করা হবে বন্যাপ্রবণ মাতারবাড়ি মহেশখালী দ্বীপের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে।

বিদ্যুৎকেন্দগুলো নির্মাণ হলে ২০৩১ সাল নাগাদ এগুলো থেকে প্রতি বছর ৭২ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। হাজার হাজার টন বিষাক্ত পারদ, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার অক্সাইড, কয়লাজাত ছাই এবং কনা দূষণে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে।

এইউএ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।