নতুন আইনের প্রয়োগ : রাজধানীর সড়কে কমেছে পরিবহন
নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়েছে গত ১ নভেম্বর। তবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে আজ (সোমবার) থেকে। নতুন আইনটি বাস্তবায়নের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। নতুন আইন প্রয়োগের প্রথম দিন আজ রাজধানীতে আটটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্রথম দিনই রাজধানীর সড়কে দেখা গেছে গণপরিবহনের সংখ্যা খুবই কম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী সাধারণ।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, যেসব পরিবহনের কাগজপত্র ঠিক নেই ফিটনেসের সমস্যা রয়েছে কিংবা চালকের কাঙিক্ষত মানের লাইসেন্স নেই, তাদের অধিকাংশই সড়কে পরিবহন নামাননি। জরিমানা কিংবা জেলের ভয়ে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা আগের তুলনায় আজ কম দেখা গেছে।
সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট, খামারবাড়ী, মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যামলী এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, আগের তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী সাধারণও। ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা সিএনজির সংখ্যাও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম দেখা গেছে।
শ্যামলীর বাসিন্দা রিপন মিয়া কলেজগেট এলাকায় সিএনজিতে ওঠার আগ মুহূর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বংশাল যাব। কিন্তু শ্যামলীতে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে যানবাহন পাচ্ছিলাম না। গণপরিবহন থাকলেও গেটলক করা। আজ সিটের অতিরিক্ত যাত্রীও নিচ্ছে না বাসগুলো। বাধ্য হয়ে হেঁটে কলেজগেট এলাম। এখানেও বাসে উঠতে না পেরে সিএনজি ধরে রওনা দিচ্ছি।’
আসাদগেট এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, ‘এমনি দিনে সড়কে দাঁড়ানো যায় না। গাড়িতে ঠাসা থাকে সড়ক। শব্দে টেকা যায় না। আজ সে রকম কিছু মনে হচ্ছে না। সড়কে গাড়ির সংখ্যা যেন অর্ধেকে নেমেছে।’
আসাদগেট এলাকার ট্রাফিক সদস্য রেজাউল বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুক্র ও শনিবার ছাড়া সার্বক্ষণিক চাপ থেকে এ এলাকার সড়কে। কিন্তু আজ বিশেষ চাপ ছিল না। সব ধরনের পরিবহন কম লক্ষ্য করা গেছে। নতুন আইনের প্রয়োগে জরিমানা ও মামলা এড়াতেই গাড়ির সংখ্যা সড়কে কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন আইনের প্রয়োগ শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্রথম দিন বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ছয়টি স্থানে মোট আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
রাজধানীর সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় দুটি পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোট ৩০টি মামলা এবং ২৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে আদালত-৮ এর অধীনে ১০টি মামলা এবং সাড়ে ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তিনটি ধারায় এক পরিবহনকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার এবং একটি ধারায় সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে আদালত-৭ এ ২০টি মামলা ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সর্বোচ্চ জরিমানা করা হয় ৫০০ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আদালত-৮ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। প্রথম দিন হিসেবে জরিমানার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রয়োগ না করে সচেতনতার জন্য আইনের মধ্যে থেকেই কম জরিমানা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জরিমানা ও মামলা করার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অধিকাংশ যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বা কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ফিটনেস নেই, সংরক্ষিত সিটের নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুমোদিত সিটের বাইরে অতিরিক্ত সিট বসানো হয়েছে। ভাড়ার চার্ট নির্ধারিত স্থানে নেই। চালকের ক্ষেত্রে লাইট (হালকা) লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাতে দেখা গেছে, যা নতুন আইনের ব্যত্যয়। তাই মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।’
বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এ কে এম মাসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে পরিবহন মালিকপক্ষের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই আজ নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগের প্রথম দিন সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে। কারণ যাদের বা যেসব পরিবহনের কাগজপত্র নেই স্বাভাবিকভাবেই তারা পরিবহন সড়কে নামাননি। যে কারণে গণপরিবহনের সংখ্যা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
বিআরটিএ কর্তৃক পরিচালিত আটটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করেছি। ব্যাপক সাড়া পড়েছে লক্ষ্য করছি। যাদের হেলমেট নেই তারা হেলমেট কিনছেন পরেছেন। বিআরটিএ কার্যালয়ে ভিড় বেড়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন। নতুন আইনের প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন হিসেবে আমরা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ না করে সহনীয় মাত্রায় জরিমানা ও মামলা করেছি, কাউকে জেল দেয়া হয়নি। যাতে মানুষ সচেতন হয়। তবে ধীরে ধীরে আইনের সর্বোচ্চ ও যথাযথ প্রয়োগ করা হবে।’
জেইউ/এসআর/জেআইএম