পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার
প্রাণ ফিরে পেয়েছে দেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত সৈকত নগরী কক্সবাজার। কোরবানির ঈদের ছুটিতে পর্যটকে ভরপুর হয়ে আছে এখানকার হোটেল-মোটেল, গেস্ট ও রেস্ট হাউজগুলো। পদচারণা বেড়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতেও। এসব পর্যটকদের উপলক্ষ করে অনেকদিন পর চালু হয়েছে দেশের প্রসিদ্ধ প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের জাহাজগুলো। ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমেছে জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে।
সূত্র মতে, ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে কক্সবাজারে। এবছরও ব্যতিক্রম হয়নি। প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তবে অন্য বছরের ন্যায় উপচেপড়া ভিড় ছিল না। আগেই কক্সবাজারের চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউজের অর্ধেক রুম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছিল, এ বছরের প্রবল বৃষ্টি ও মহাসড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সংশয়ের পরেও পর্যটন স্পটগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
এদিকে ঈদুল আজহার ছুটি উপভোগ করতে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। পর্যটকের আগমনে দর্শনীয় স্থানসমূহ মুখরিত হয়ে উঠেছে। পর্যটকের দেখা মিলায় স্বস্তির নিশ্বাঃস ফেলছেন ব্যবসায়ীরা।
গত শনিবার পর্যটকবাহী বে ক্রুজার-১ জাহাজ ২১৭ জন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনে যায়। দীর্ঘদিন পর পর্যটকের দেখা পাওয়ায় আনন্দিত দ্বীপবাসীও। সরগরম হয়ে উঠেছে হোটেল, মোটেল, রেস্তরাঁ, চা দোকানসহ দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলো। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রত্যেক বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে পর্যটক আগমন শুরু হয়ে আবহাওয়া অনুকূল থাকা পর্যন্ত এ নৌ-রুটে পাঁচটি জাহাজ যাতায়াত করে।
কলাতলীর সিনাইট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও মৌলানা জামাল হোসেন জানান, গত কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটক আগমন কম ছিল। কিন্তু এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় এবার ঈদে পর্যটন মৌসুমে আবাসন ব্যবসা ভালো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরেজমিন হোটেল মোটেল জোন এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেল জোনের সব হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। পর্যটন স্পট মহেশখালী, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকের পদভারে মুখরিত। কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ মন্দিরেও প্রচুর পর্যটকের ভিড় দেখা যায়।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, ঈদের পর থেকে দুই শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ পূর্ণ হয়ে গেছে। যদি বিশদ পরিসরে বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে এ অবস্থা আরো কিছুদিন থাকবে।
ঈদের ছুটিতে ভিড়ের মাঝে পর্যটকরা কক্সবাজারে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন তারই লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশও বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।
তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের লোকবল আরো বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারে তারই লক্ষ্যে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সি-ইন ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা থাকছে। এছাড়া হিমছড়ি, দরিয়ানগর ও ইনানী পর্যটন স্পটে রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি পয়েন্টে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দফতর বা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
এবিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বখাটেদের উৎপাত ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ২৫টি নতুন বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ