ধাপে ধাপে জরিমানা নেবে ট্রাফিক পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ট্রাফিক আইন অমান্যে নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’তে মামলা দেবে পুলিশ। ইতোমধ্যে মামলা দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সার্জেন্ট ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের।

ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ট্রাফিক সার্জেন্টরা সব ধরনের মামলা দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন আইনের মাধ্যমে মামলা দেয়া হবে। তবে এখন কাগজে লিখে মামলা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে কাগজে মামলা দেয়ার ফরম তৈরি করেছে ট্রাফিক বিভাগ।

নতুন এই ফরমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, অভিযুক্তের নাম, স্থায়ী ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর থাকবে। এছাড়া অপরাধ সংগঠনের সাক্ষীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর থাকবে।

এই ফরমে ৯ ধরনের অপরাধের জরিমানার পরিমাণ (সাময়িকভাবে) উল্লেখ করা হয়েছে। ফরমে আইনের ধারা ৬৬ অমান্য করলে প্রথমবার পাঁচ হাজার এবং দ্বিতীয়বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার ঘর রাখা হয়েছে। এই ধারাটি ড্রাইভিং লাইন্সেন্স না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার, ভিন্ন শ্রেণির লাইসেন্স ও ‘পেশাদার’ লাইসেন্স না নিয়ে গণপরিবহন চালালে প্রয়োগ হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড।

Road-1

ফরমে আইনের ধারা ৭২ ও ৭৫ অমান্য করলে প্রথমবার ১০ হাজার ও দ্বিতীয়বার ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ৭২ ধারায় রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

৭৫ ধারায় ফিটনেস না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ থাকাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ ধারায়ও সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

৮৪ ধারায় মোটরযানের কারিগরি ত্রুটি থাকলে প্রথমবার ১৫ এবং দ্বিতীয়বার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা নেবে পুলিশ। এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন বছরের কারাদণ্ড।

গাড়িতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত লোড নিলে ৮৬ ধারায় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, এক বছরের জেল ও দুই পয়েন্ট কর্তন করার বিধান রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রথমবার এই অপরাধে ডিএমপি ১০ হাজার ও দ্বিতীয়বারের জন্য ২০ হাজার টাকা আদায় করবে।

৮৭ ধারায় বেপরোয়া গাড়ি চালালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান উল্লেখ থাকলেও এই অপরাধে ডিএমপি ২৫০০ এবং দ্বিতীয়বারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করবে।

৮৯ ধারায় ঝুঁকিপূর্ণ যান চালিয়ে পরিবেশ দূষিত করলে প্রথমবার ছোট গাড়ি ২৫০০ এবং বড় গাড়ির জন্য পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছোটগাড়িকে পাঁচ হাজার ও বড় গাড়িকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হবে।

Road-1

৯২ ধারায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করে ছোট গাড়ি চালালে প্রথমবার এক হাজার ও দ্বিতীয়বার দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। একই অপরাধে বড় গাড়ির চালককে যথাক্রমে তিন হাজার ও ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

৯৫ ধারায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে চালক বা কন্ডাক্টর যদি থাকে ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর না দেয় এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে, তাহলে প্রথমে তাকে পাঁচ হাজার ও দ্বিতীয়বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া নির্ধারিত ফরমে অভিযুক্তের স্বাক্ষর নেয়া হবে। এবং প্রয়োজনে শুনানির জন্য ডিসি অফিসে হাজির হওয়ার তারিখ দেয়া হবে।

আইনে প্রথম দুবারের জরিমানা উল্লেখ করা থাকলেও তৃতীয়বারের কথা উল্লেখ নেই। সূত্র জানায়, তৃতীয়বার একই অপরাধ করলে নিজ নিজ বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠানের পর তাকে মামলা, জরিমানা কিংবা সাজা দেয়া হতে পারে।

নতুন ট্রাফিক আইন প্রয়োগের বিষয়ে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, নতুন আইন সম্পর্কে ডিএমপি থেকে যে ধরনের নির্দেশনা আসবে আমরা সেগুলো পালন করব। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে ইতোমধ্যে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া সার্জেন্টসহ কর্মকর্তাদের আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের বিষয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ডিএমপিতে পজ মেশিনের মাধ্যমে মামলা দিতাম, তবে সফটওয়্যার আপডেটের কারণে মেশিনে মামলা দেয়া আপাতত বন্ধ আছে। আমরা আগের নিয়মে কাগজের কেস স্লিপ বই প্রিন্ট করেছি, সেটা দিয়ে আপাতত মামলা দেয়া হবে।’

এআর/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।