প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে গাছ সরাতে ৪ ঘণ্টা, সারাদেশে কী হয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৯

‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সামনে ঝড়ে পড়া গাছ সরাতে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে’ জানিয়ে ওই দফতরের সচিব সাজ্জাদুল হাসান প্রশ্ন তোলেন, তো সারাদেশে কী হয়?

শনিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল এ কথা বলেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘আমি কক্সবাজারের ডিসি ছিলাম, আমাদের এই যে ৯ নম্বর ও ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত- এগুলো সাধারণ মানুষকে বোঝানোটা কঠিন হয়। সেন্টমার্টিনে যখন ৯ নম্বর সংকেত দেয়া হলো, সরিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপার। (মানুষ) বলে যে, আমরা পানিতে হাত দিয়েই বুঝতে পারি আসলে ৩ নম্বর না ৪ নম্বর; আপনারা ৯ নম্বর যা-ই বলেন। এই অবস্থা, তাদের কনভেন্স (বোঝানো) করা খুবই কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘তাদের ইভ্যাকুয়েট (বাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা) করা, এটা নিশ্চিত করাটা বড় জিনিস। এটা ফিল্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিসি কো-অর্ডিনেট করেন সবসময়। ডিসিকে যেন লাইন মিনিস্ট্রি থেকে বারবার বিরক্ত করা না হয়, এটা একটা বড় জিনিস।’

‘মিনিস্ট্রি তো বলতেছে, ছুটি বাতিল করে দিয়েছি, এই করেছি, সবাই আছে, সবাই থাকে। তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমি প্রাইম মিনিস্টার অফিসে আছি, কিছুদিন আগে একটা বড় ঝড় হলো, সেই ঝড়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটা গাছ পড়ে রইল। সেই গাছটা কাটার লোক নেই। পিডব্লিউডির লোক ডাকলাম, এই ডাকলাম, সেই ডাকলাম- চার ঘণ্টা লাগল ওই গাছটা সরাতে!’

এ সময় পাশ থেকে তথ্য সচিব মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘করাত নাই।’

সঙ্গে সঙ্গে সাজ্জাদুল হাসানও বলেন, ‘করাত নাই।’ এ সময় তিনি মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘স্যার, খেয়াল আছে তো স্যার।’ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন মুখ্য সচিব।

সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘করাত পাওয়া গেল না। যেটা নাকি প্রাইম মিনিস্টারস অফিসের অবস্থা। তো সারাদেশে কী হয়! সবার ছুটি যতই বাতিল করা হলো, আমি অনুরোধ করব অন্যান্য মিনিস্ট্রির যে সচিব এবং তাদের প্রতিনিধিরা আসছেন তাদের একটা জিনিস বলে দেয়া, সবসময় যেন তারা টিম হিসেবে ডিসির অফিসেই সার্বক্ষণিক এ সময় থাকে। যাতে চট করে কো-অর্ডিনেট তারা করতে পারে। যার যার অফিসে না থেকে আর কি।’

১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পাশ্র্ববর্তী জেলা থেকে ওই জেলাগুলোতে আরও ফোর্স মোতায়েন করা দরকার বলে মনে করেন প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি কার্যক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা তো সাধারণ মানুষের পালসটা বোঝে, তারা বললে মানুষ (আশ্রয় কেন্দ্রে) যাবে। অফিসার গিয়ে বললে যাবে না।’

ঝড় শুরু হলে মাঠপর্যায়ে কেউ মুভ করতে পারবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, ‘এর আগেই মুভ করতে হবে। সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একটা হচ্ছে লাইন মিনিস্ট্রির কাজ, রেগুলেটিং কাজ, প্রচার-প্রচারণা সব ঠিক আছে। যারা ফিল্ডে কাজ করবে তাদের কাজটি বেশি দরকার। কতক্ষণ পর দেখবেন সবার মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, চার্জ দিতে পারছে না। কার সঙ্গে কী যোগাযোগ করবে।’

প্রসঙ্গত, প্রবল বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলে আঘাত করবে। মূলত খুলনার সুন্দরবন অংশের কাছে আঘাতটা আসবে। আইলার মতো এবারও সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উপকূলে এটি আঘাত করার সময় কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার বা তার বেশি থাকতে পারে। সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করা শুরু করলে, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা উপকূল অতিক্রম করবে। এরপর এটি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতোমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

এ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

আরএমএম/এমএআর/এমকেএইচ

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।