নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর যত কর্মসূচি
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে বুধবার ঢাকা ত্যাগ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় নিউইয়র্কে পৌঁছেই ব্যস্ত সময় কাটাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন জাগো নিউজকে জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর দিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দফতরে শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন অধিবেশনে পোপ বেনেডিক্টের বিশেষ বক্তৃতায়। আর সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলন। সাধারণ অধিবেশন হলে এই শীর্ষ সভায় বক্তব্য রাখবেন সদ্য বিদায়ী সাধারণ পরিষদ প্রেসিডেন্ট উগান্ডার রাষ্ট্রপতি ইউবেরি মুসেভেনি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
ওই দিনই দুপুরে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন তার আবাসিক হোটেলের কার্নেগি হলে অনুষ্ঠেয় বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ)’র গোলটেবিল আলোচনায়। এতে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বিকেলে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক বিশ্ব নেতৃত্বের ফোরামে বক্তব্য রাখবেন তিনি। বিকেল ৫টায় এই অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নেবেন তিনি। এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে দিনের কর্মসূচি।
২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংলাপে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকবেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল।
বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন সাউথ সাউথ কো-অপারেশন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায়। জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুম-৬ এ অনুষ্ঠেয় এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। দিনের পরের ভাগে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও দেখা হবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। দুটি বৈঠকই হবে প্রধানমন্ত্রীর আবাসিক হলের মিটিং কক্ষে।
প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তিখাতে টেকসই উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ নৈশভোজ।
২৭ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ সদর দফতরে ২০১৫ পরবর্তী বিশ্বের উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে চলমান প্ল্যানারিতে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন সকালের অধিবেশনের ২১তম বক্তা হিসেবে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা (ঢাকার সময় রাত সাড়ে আটটা)র দিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থাকতে পারে বলেই জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র।
প্ল্যানারি সেশনে বক্তব্যের পাশাপাশি ওইদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে নারী পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক বৈঠক। এতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
নিউইয়র্ক হিলটন মিডটাউন হোটেলে প্রধানমন্ত্রী যাবেন বিকেল সাড়ে তিনটায়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটি এসময় তাকে সংবর্ধনা জানাবে। বিকেল ৫টায় এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ফের নিজ আবাসিক হোটেলে ফিরবেন তিনি।
আর সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন সিপ্রিয়ানি লা স্পেশিয়ালিতায়। সেখানে তিনি গ্রহণ করবেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া বিশেষ অ্যাওয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার পাশাপাশি থাকবে দুই মিনিটের একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশনও। এরপর বিশেষ নৈশভোজেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় আবার জাতিসংঘ সদর দফতরে যাবেন। সেখানে ইন্দোনেশিয়ান লাউঞ্জ ওয়েস্ট ফয়ারে বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অভ্যর্থনা জানাবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
ওই দিনই জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ৭০তম অধিবেশনের মূল পর্বের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়। সাধারণ অধিবেশন হলে এই অধিবেশনে প্রথম বক্তব্য রাখবেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধান, এরপর যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড ও চীনা রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তব্য রাখবেন।
ওইদিন দুপুরে নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রীও।
বিকেল ৩টায় বিশ্বশান্তি রক্ষা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন ও বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পাকিন্তান, রুয়ান্ডা, উরুগুয়ের রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধানরা বক্তব্য রাখবেন।
ওই দিনই বিকেল ৫টায় নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় যোগ দেবেন সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিরোধী শীর্ষ সম্মেলনে। যার মূল বক্তা হওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। সদর দফতরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন বাংলাদেশের আয়োজনে এমডিজি টু এসডিজি- অ্যাওয়ে ফরোয়ার্ড শীর্ষক সাইড ইভেন্টে। এতে নেদারল্যান্ডস’র রাজা, জাপানের প্রধানমন্ত্রী, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী, বেনিনের প্রেসিডেন্ট, সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্টসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখবেন। সমাপনী ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।
ওই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কার্যালয়ে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা রয়েছে তাঁর।
৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ। ওই দিন স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ১১টার (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার) দিকে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য বছরের মতোই বাংলায় তার ভাষণ দেবেন।
স্থানীয় সময় ৬টায় প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে। সদরদফতরে মহাসচিবের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১ অক্টোবর সকালে প্রধানমন্ত্রী হোটেল ছাড়বেন। আর জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ-১৭৮ এ লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন সকাল ৮টায়।
লন্ডনের স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে হিথ্রো পৌঁছানোর পর যাবেন লন্ডনের ব্রাক স্টিটস্থ হোটেল ক্লারিজে। পরের দিন ২ অক্টোবর বিকেলে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তিনি। ওই রাতেই তিনি দেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বিজি ০০২ উড়াল দেবে। যা বাংলাদেশ সময় ৩ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে পৌঁছাবে সিলেটের ওসমানি বিমানবন্দরে। আর সেখান থেকে ফের রওয়ানা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছবেন বেলা দেড়টার দিকে।
এইচএস/এসএইচএস/আরআইপি