শুধু নামেই ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট


প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

গবেষণার বিষয় আছে। গবেষকও ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু, প্রায় তিন বছর আগে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সে ২৩ জন গবেষক ভর্তি করেও অদ্যাবধি এর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি। এমনকি প্রণয়ন করা হয়নি সিলেবাসও। ফলে নামসর্বস্ব রয়ে গেছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ইনস্টিটিউট আপাত অকর্মণ্য থাকলেও এখান থেকে ছয় বছর যাবত বেতন পাচ্ছেন ছয়জন কর্মকর্তা এবং চারজন কর্মচারী। দীর্ঘদিন এভাবে অতিবাহিত হওয়াতে অনেক গবেষকই গবেষণা বাদ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

চিত্রটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত রিসার্চ ইনস্টিটিউটের। কেবলমাত্র ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভর্তি হয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ গবেষকদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশ ও আচার্যের অনুমোদন নিয়ে ২০০৯ সালে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১১ সালের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই ইনস্টিটিউটে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি করানোর সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে গবেষকেরা দুই বছরের এমফিলের জন্য ১৯ হাজার এবং তিন বছরের পিএইচডির জন্য ২৩ হাজার টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের শিক্ষা কার্যক্রমই শুরু হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি গবেষণায় অবদান রাখতে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফেরদৌস রহমান এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উমর ফারুক।

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা জাগো নিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যেন অন্যত্র যেতে না হয় তাই ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য ২০১৩ সালের ৯ মে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বভার বুঝে নেয়ার পর ইনস্টিটিউট চালুর ব্যাপারে কোনো সভাই আহ্বান করেননি। কেবল তার উদাসীনতায় মুখ থুবড়ে পরে থাকা ইনস্টিটিউটি দেশের গবেষণায় কাজে আসতে পারছে না।

অপরদিকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণার উদ্দেশে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে তা কাজে না লাগায় ক্ষুব্ধ এসব গবেষক।

শিক্ষা মন্ত্রালয়ে চাকরিরত মো. সায়েদ আলী জানান, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে গবেষণার উদ্দেশে ছুটিতে আছি যার মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু দীর্ঘদিন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমই নেই। গবেষণার কাজ শেষ করা নিয়ে বিপদে আছি।

রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নাজুক অবস্থার কারণে গবেষণা ছেড়ে দেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, নামেই গবেষক হিসেবে ভর্তি ছিলাম। ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে তাগিদ দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো আন্তরিকতাই দেখি নাই। বাধ্য হয়ে ছেড়েই দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী গবেষক জাগো নিউজকে জানান, কর্মরত প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ছুটি না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন দু-কূলই হারাতে বসেছি।

গবেষকদের একজন তত্ত্বাবধায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা বলেন, গবেষকদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যে কাজ সেটাই বুঝলাম না। কেবল নামসর্বস্ব ইনস্টিটিউট ছাড়া এটি আর কিছু নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ওয়াজেদ রিসার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী জাগো নিউজকে বলেন, কোনো সিলেবাস প্রণয়নই হয়নি এখনো। ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে যার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান।

তবে কবে নাগাদ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে উপাচার্য জানান বিষয়টি নিয়ে বসবো।

এমএএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।