বেসিক ব্যাংক অনিয়মে অবশেষে মামলা করলো দুদক
বেসিক ব্যাংকে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় অবশেষে মামলা করল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার শেষ বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান ও রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দুদক ১৮টি মামলা দায়ের করেছে। গত কয়েকদিন ধরে অনুসন্ধান দলের সদস্যরা মামলার এজাহার তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের ৫৬টি মামলা অনুমোদন করা হয়েছে। কাল ও পরশু বাকি মামলাগুলোও হতে পারে।
জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক প্রনব কুমার জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বেসিক ব্যাংকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর ৫৪ মামলা অনুমোদন দেয় কমিশন। পরে আরও দুটি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয় বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হলেও কোনো মামলায় তাকে আসামি করা হচ্ছে না।
তবে অধিকাংশ মামলাতেই ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা রয়েছেন অভিযুক্তের তালিকায়। কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৬ কোম্পানির ৭৪ জনকে আসামি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ জন ব্যাংক কর্মকর্তার নাম থাকছে আসামির তালিকায়। কোম্পানি মালিক ও ব্যাংক কর্মকর্তা মিলে মোট আসামি হচ্ছেন ১০০ জনের মতো।
দীর্ঘদিন ‘কার্যত’ বন্ধ থাকার পর জুলাই মাসে বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানে সক্রিয় হয় দুদক। জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে বেসিক ব্যাংক নিয়ে আলোচনা এবং ৭ জুলাই সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর থেকে দুদক অনেকটাই নড়েচড়ে বসে। অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় অনুসন্ধান দলকে।
গণমাধ্যমে আবদুল হাইকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন তৈরির বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি শুরু হলে কিছুদিন থমকে যায় অনুসন্ধান দলের কাজ। উচ্চপর্যায়ের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় থেকে অবশেষে কমিশনের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আবদুল হাই ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বেসিক ব্যাংকের চারটি শাখায় ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় আলাদা মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, পাঁচজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. সেলিম, এমদাদুল হক, ফজলুল সোবহান, কনক কুমার পুরকায়স্থ ও এ মুনায়েম খান, প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান ও শাহজাহান মোল্লা, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খান ইকবাল হাসান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. আশরাফুজ্জামান, ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার ব্যবস্থাপক মো. জালাল উদ্দিন, এজিএম এস এম আনিসুর রহমান চৌধুরী, সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী, গুলশান শাখার শাখা ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, এ শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ এস এম জাহিদ হাসান প্রমুখ।
এ ছাড়া ওয়েল সোয়েটার্স, মদিনা হার্ডওয়্যার স্টোর, সোহেল ট্রেডিং এজেন্সি, টোকিও এজেন্সি, টোকিও নিট গার্মেন্টস, ভারনারেবল এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, ক্লাসিক অ্যাকসেসরিজ, ডেলটা সিস্টেমস, এআরএসএস এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ, এবি ট্রেড লিংক, মেসার্স আর কে ফুড লিমিটেড, মেসার্স নিমেক্স লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
এসএ/একে/পিআর