প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন বিসিএস ক্যাডারের চেয়ে বেশি হোক
‘আমি বার বার বলেছি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন এক টাকা হলেও বিসিএস ক্যাডার থেকে বেশি হওয়া উচিত। বিসিএস ক্যাডারের চেয়ে বেতন বেশি হলে সমস্ত মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য দরখাস্ত করবে। হ্যাঁ, করবেই। আর এক টাকা বেশি বলার আরেকটি অর্থও আছে। অন্তত সম্মানের প্রশ্নে।’
বলছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তিনি। সাবেক জনতা ব্যাংকের এ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন কয়েকবার। অর্থনীতি ও উন্নয়নের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক বারকাত বলেন, ‘আপনাকে শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলা হলো। আপনি প্রথমে একটি ভবন বানালেন। শিক্ষার্থীরাও তৈরি আছেন। স্কুল দিলেই শিক্ষার্থীরা আসবেন। শিক্ষক লাগবে। এই তিনটি হলেই শিক্ষার পরিবেশ হয়ে গেল। এটিকে আমি বলি উন্নয়নের সফট পার্ট (সহজ অংশ)। কঠিন পার্টটি হচ্ছে পরের। অর্থাৎ জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের যে মান তার কিন্তু ঘাটতি রয়ে গেল। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের এ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষকের যে সক্ষমতা, তা নেই।’
প্রাথমিক শিক্ষার মানের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণি পাসের একজন শিক্ষার্থীর যে জ্ঞান থাকার কথা, তা নেই। পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণি মানের জ্ঞান অর্জন করছে।’
শিক্ষার মানোন্নয়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বার বার বলেছি, প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন এক টাকা হলেও বিসিএস ক্যাডার থেকে বেশি হওয়া উচিত। বিসিএস ক্যাডারের চেয়ে বেতন বেশি হলে সমস্ত মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য দরখাস্ত করবে। করবেই। আর এক টাকা বেশি বলার একটি অর্থও আছে। অন্তত সম্মানের প্রশ্নে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকের বাচ্চারাই আমাদের সম্পদ। তাদের যদি আমরা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারি, তাহলে সবই হারাতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সক্ষমতার ফাঁদে পড়তে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে আমি জোর দিতে বলছি। সব সময়ই বলি। নীতিনির্ধারকরা বুঝতে চান না। কারণ বুঝলেই সমস্যা।’
‘ধরুন, একটি জেলায় শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠান চলছে। জেলা প্রশাসক পায়রা উড়াচ্ছেন। অথচ, আবেদন রাখে ওই জেলার সবচেয়ে প্রবীণতম শিক্ষককে দিয়ে পায়রা উড়ানো। আপনি সব কিছুই আমলাতান্ত্রিকতার মধ্যে প্রবেশ করালে সমাজে ভারসাম্য আসে না। শিক্ষার মান আমলারা বাড়াতে পারবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হবে’- যোগ করেন অধ্যাপক বারকাত।
এএসএস/এমএআর/এমকেএইচ