রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কার্ড চীনের হাতে : ড. ইমতিয়াজ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৯ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, শুধু আন্তর্জাতিক চাপ নয়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বহুমাত্রিক চাপ দরকার। যেখানে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব গোষ্ঠীরই ভূমিকা রাখতে হবে। চতুর্দিক থেকে যত চাপ আসবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়ে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার তত বাধ্য হবে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের হাতে অনেকগুলো কার্ড রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ‘রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন’ নিয়ে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় লালমাটিয়া মহিলা কলেজকে পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজ বিজয়ী হয়।

ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টা এবার ছিল জোনোসাইডাল ইনটেন্ড (গণহত্যার অভিপ্রায়স্বরূপ)। যে মুহূর্তে একটা দেশ জেনোসাইড ঘটায়, তখন সেটা আর দ্বিপাক্ষিক থাকে না, আপনা আপনিই আন্তর্জাতিক হয়ে যায়। মিয়ানমার যদি শতভাগ লোকও ফিরিয়ে নেয়, তারপরেও একদিন না একদিন এই জেনোসাইডের বিচার হতেই হবে। তা নাহলে এই ধরনের জেনোসাইড বারবার ঘটতেই থাকবে। মিয়ানমারের জনগণই হয়তো একদিন এর বিচার করবে। তবে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের হাতে অনেকগুলো কার্ড রয়েছে। যে কার্ডগুলো ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে খেলা করতে পারে।’

Rohinga

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারের প্রতি রয়েছে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট। এই জনগোষ্ঠী বারবার মিয়ানমার কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ আঞ্চলিক দেশগুলোকে নিয়ে যৌথ জোট গঠন করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় তাদের দেশে যেতে পারে মায়ানমারকে এই ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলির আরো সম্পৃক্ততার প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, কূটনীতিতে শেষকথা বলে কিছু নেই। আমাদেরকে ধৈর্য হারালে চলবে না। রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রেখে কারো স্বার্থই সিদ্ধ হবে না। চীনকে এই বিষয়ে আরও বেশি বুঝতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘সম্পূর্ণ মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চোখে এখন সর্ষে ফুল দেখছে। রোহিঙ্গারা এখন আর তাদের দেশে ফিরে যেতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ কোনো কিছু করে উঠতে পারছে না। মনে হচ্ছে, এই সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিকভাবে আমরা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছি। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কোনো শক্তিধর রাষ্ট্রই তাদের জোরালো ভূমিকা রাখছে না।’

‘রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপই এখন বেশি জরুরি’ শীর্ষক এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক ঝুমুর বারী, সাংবাদিক মাসুদ করিম এবং ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন।

জেপি/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।