বেইলি রোড-গুলশান-বনানীর ফ্ল্যাটে ক্যাসিনো
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবের পাশাপাশি অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটেও ক্যাসিনো স্থাপন করা হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ক্যাসিনো পরিচালনা করছেন কয়েকজন নেপালি ব্যবসায়ী। পাশাপাশি নেপাল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা কয়েকজন বাংলাদেশি যুবকও এগুলোতে কাজ করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি তালিকা তৈরি করে ফ্ল্যাটগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি করছেন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তারা ঢাকার অভিজাত এলাকার ২১টি ফ্ল্যাটে ক্যাসিনো চলার তথ্য পেয়েছেন। শিগগিরই সেখানে অভিযান চালানো হবে। এগুলো পরিচালনা করেন কয়েকজন নেপালি। যাদের কেউ কেউ স্টুডেন্ট ভিসা আবার কেউ বাংলাদেশে ঘুরতে আসার ভিসা নিয়ে এসব কাজ করছেন। ফ্ল্যাটের এসব ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী, রাজধানীর বেইলি রোডের ৩টি ফ্ল্যাটে, গুলশানে ১টি, বনানীতে ১০টি ও উত্তরায় ৭টি ফ্ল্যাটে অবৈধ ক্যাসিনোর ব্যবসা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বেইলি রোডের ক্যাসিনো তিনটির নিয়ন্ত্রক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে আহমেদ টাওয়ার, সুইট ড্রিমসের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত হোসেন ওরফে সেলিম।
এছাড়া উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের পূবালী ব্যাংকের দোতলায় ক্যাসিনো চালাচ্ছেন উত্তরা পশ্চিম থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকারিয়া। এসব এলাকার ভবনের ফ্ল্যাটগুলো অনেক নিরাপদ, সেখানে অপরিচিত কেউ ঢুকতে পারে না। তাই এসব ফ্ল্যাটে ক্যাসিনো স্থাপনকে নিরাপদ বলে মনে করে এগুলোতে ক্যাসিনো স্থাপন করা হয়েছে। তবে তাদের তিনজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, র্যাব বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। যদি ক্লাবের পাশাপাশি এসব এলাকার ফ্ল্যাটে কোনো ধরনের ক্যাসিনো থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে র্যাব।
আরেকটি সূত্র জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব যখন প্রথমবারের মতো চারটি ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়, তখনই এসব ক্যাসিনোর নেপালিরা গা ঢাকা দেয়। আর তাদের গা ঢাকা দিতে সহায়তা করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুজন সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আসা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী সেদিন রাতে সেগুনবাগিচার একটি বাসায় অবস্থান করছিল নেপালিরা। দুজন ওয়াকিটকি হাতে এসে বাড়িটি থেকে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়।
দুজনকেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের একজন একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদর দফতরের সহকারী প্রোগ্রামার, আরেকজন একই সংস্থার রমনা জোনের কনস্টেবল সমমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। দুজনের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
এদিকে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী নেপালিদের পালাতে সহায়তাকারী হিসেবে কয়েকজন পুলিশ সদস্য জড়িত আছে বলে জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নেপালিদের আত্মগোপনের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন টিম কাজ শুরু করেছে। সিসিটিভির ছবি পরীক্ষা করে ওয়াকিটকি হাতে থাকা ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ওয়াকিটকি শুধু পুলিশ সদস্যরাই ব্যবহার করে না। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে থাকে। সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে পুলিশ সদস্য বলে প্রচার না করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এআর/এমএসএইচ/পিআর