ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা : সম্পৃক্ততায় ইসির ১৫ কর্মকর্তা!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৮ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় সম্পৃক্ত করার কাজে ইসির কতজন জড়িত? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, এ কাজে যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছি এ মুহূর্তে তাদের নাম বলতে চাই না। তবে এ সংখ্যা ১৫ জনের মতো।

তিনি বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের নাম প্রকাশ করব। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে, এর সঙ্গে কতজন জড়িত। তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে আমরা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করছি না। তবে এ সংখ্যা ১৫ এর মতো, এর অধিক নয়।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য যা যা করতে হয় তা করবেন বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

সর্বোচ্চ কোন লেভেলের কর্মকর্তারা এ কাজে জড়িত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অচিরেই আপনারা তাদের নাম-পরিচয় জানতে পারবেন। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ৬১ জনের তালিকা পেয়েছি, যারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে, তারা কীভাবে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করল। কারা তাদের সহযোগিতা করল। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, ইসির এনআইডি বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতি করতে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। এনআইডিকে সুরক্ষিত করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমরা তাই করব।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের মূল ডেটাবেজ সুরক্ষিত আছে। যারা এখানে ঢোকার অপচেষ্টা করেছিল তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে আইটি বিভাগ এ অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করেছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। জিরো টলারেন্স অ্যাগেনেস্ট করাপশন।

তিনি আরও বলেন, এটা বাস্তবায়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যদি এটি বাস্তবায়ন করতে অ্যান্টি কাউন্টার টেরিজম, সিইডি, দুদক, এসবি সহায়তার প্রয়োজন হয় আমরা তাদেরও সহায়তা নেব।

ল্যাপটপ চুরি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১২ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে চারটি এবং বিভিন্ন সময় আরও তিনটি ল্যাপটপ হারিয়েছিল। এসব ল্যাপটপ দিয়ে ইসির সার্ভারে প্রবেশ করা যাবে না। কারণ, সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইসি নির্ধারিত পাসওয়ার্ড দেয়া মডেম লাগবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে চাকরিচ্যুতরা যাতে কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে সংশ্লিষ্ট হতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ে কঠোর নির্দেশা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধের কারণে যারা ইসি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে তাদের তালিকা করে সেই তালিকা ধরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি। ইসির কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছি যাতে কোনোভাবেই অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া না হয়। ডাটা অ্যান্টি অপারেটর হিসেবেও যাতে তারা নিয়োগ না পায় তারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব প্রজেক্ট থেকে ইসিতে জনবল সরবরাহ করা হয় তাদেরও এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এসব লোকদের নিয়োগ দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাকরিচ্যুতদের আমরা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখছি। ইতোমধ্যে আমরা বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছি, যাতে তারা কোনোভাবেই ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ করতে না পারে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ব্যাপারে যাদেরই সম্পৃক্ততা পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। সে যেই হোক না কেন। এখানে যদি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে হয় আমরা তা করব। ফৌজদারি মামলা করতে হলে আমরা তা করব। দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে যা যা করতে হয় তাই করব। ইতোমধ্যে তদন্তে আমাদের ইসির বিভিন্ন প্রজেক্টের অনেকের নাম এসেছে। এমনকি আমাদের ইসির অনেকের নাম এসেছে। তাদেরও যাচাই বাছাই করে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ইসির কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে, যাতে তারা একই জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করতে না পারে। একই সঙ্গে আমাদের নিবন্ধন কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড অন্যরা ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য কড়া নজরদারি রাখা হবে। যদি কেউ হস্তান্তর করে তাহলে এ ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এইচএস/আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।