র্যাব কার্যালয়ে জি কে শামীম
রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে আটক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব-১ কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে জি কে শামীমের নিকেতনের ডি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর বাসা ঘিরে ফেলে র্যাব। এর আগে নিকেতন এলাকায় জি কে শামীমের আরেকটি বাসা থেকে তাকে ডেকে আনা হয়। পরে তাকে আটক করেই অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে শামীমকে র্যাব কার্যালয়ে নেয়া হয়।
শামীমের সঙ্গে তার সাত দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা হয় এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত)। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে।
অভিযান শেষে শামীমের নিকেতনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, অভিযান এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পেয়েছি। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে।
অর্থ ছাড়াও তার কার্যালয় থেকে মার্কিন ডলার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে বলে জানান র্যাবের পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এগুলোর লাইসেন্সের সত্যতা আমরা যাচাই করব। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আটজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছি।’
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-যার কাছ থেকে এত পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, মাদক ও অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে, তিনি কি ছাড়া পাবেন? এর উত্তরে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘যদি তিনি নির্দোষ হন, তাহলে কোর্টে এগুলোর ব্যাখ্যা দেবেন। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছি, কোর্টে তার বক্তব্য সঠিক হলে তিনি ছাড়া পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি তার নগদ টাকা অবৈধ উৎস থেকে এসেছে। কিন্তু এটা সত্য-মিথ্যা প্রমাণ করার দায়িত্ব তার। এটা তিনি কোর্টের সামনে প্রমাণ করবেন।’
অস্ত্রের বিষয়ে সারোয়ার আলম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্র অবৈধ কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের কিছু শর্তাবলি থাকে। সেসব ভঙ্গ করেছেন তিনি।’
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেছেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির ক্ষেত্রে তার নাম এসেছে। তার কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। এগুলো কীভাবে এসেছে আমরা তদন্ত করে বের করব।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে, যদিও তার মা বড় কোনো ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। বাকি টাকা উনার নামে। ব্যবসায়ী হিসেবে নগদ টাকা থাকতেও পারে। তবে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ছিল। তার দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রদর্শন করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে, মাদক পাওয়া গেছে, যেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
জি কে শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বলে কথা লোকমুখে শোনা গেলেও সংগঠনটির শিক্ষা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু বলছেন, শামীম যুবলীগের কেউ নন, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
এর আগে অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডেও পেয়েছে পুলিশ।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরই ছাত্রলীগের পদ হারান শোভন-রাব্বানী। এরপর আটক হন খালেদ। শুক্রবার শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করছে র্যাব।
জেইউ/এমএআর/পিআর